বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদনের শর্ত পূরণ হয়নি অনেক শিক্ষার্থীর, করণীয় কী?

ভর্তি পরীক্ষার্থী
ভর্তি পরীক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী, যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ ৭ হাজার।

প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। ফলে প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার আসন খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি আবেদনের শর্ত পূরণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের একাধিক বিকল্প সুযোগও রয়েছে। এসবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনেক দিক রয়েছে।

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন ২০২৩ সালে। ওই বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮জন। অর্থাৎ এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮১ শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি। এর প্রভাব পড়বে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আবেদনের ক্ষেত্রেও। আবেদন যোগ্যতা পূরণ না হওয়ায় এইচএসসি উত্তীর্ণদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বা পছন্দের ইউনিটে আবেদনই করতে পারবেন না। 

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলগুলোয় ভর্তির ক্ষেত্রে এইচএসসিতে সুনির্দিষ্ট ফলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চাহিদার তুলনায় কম জিপিএ পেলে আবেদনের সুযোগই থাকে না প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি আবেদনের ক্ষেত্রে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫-এর মধ্যে ৫-ই পেতে হয়। এ ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের প্রতিটিতে জিপিএ-৫ পেতে হয়। একই সঙ্গে এসএসসিতেও গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫-এর মধ্যে ন্যূনতম ৪ থাকতে হয়।

দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদনে জিপিএ নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি আবেদনে এসএসসি এবং এইচএসসি মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে জিপিএ-৮.৫ পেতে হবে। তবে এসএসসি এবং এইচএসসিতে পৃথকভাবে একজন শিক্ষার্থীকে জিপিএ-৪ করে পেতে হবে। এছাড়া জীববিজ্ঞানে জিপিএ-৩.৫ পেতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাবিতে বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার (চতুর্থ বিষয়সহ) জিপিএর যোগফল ন্যূনতম ৮ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩.৫; কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৭.৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩; ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৭.৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩.০ এবং চারুকলা ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৬.৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩.০ থাকতে হবে।

এছাড়া আইবিএ ইউনিটের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ এবং দুই পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-র যোগফল ন্যূনতম ৮.০ হতে হবে।

আরও পড়ুন: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত, ছাত্রত্ব ও সনদ বাতিল ৩৩ শিক্ষার্থীর

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন যোগ্যতা পূরণ না হওয়া শিক্ষার্থীদের করনীয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন ইউনিটে আবেদন যোগ্যতা ভিন্ন হয়ে  থাকে। যেসব ইউনিটে আবেদন যোগ্যতা পূরণ হয় সেসব ইউনিটে আবেদন করতে  পারেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় তাদেরকে অন্যদের চেয়ে ভালো নম্বর পেতে  হবে। 

এইচএসসির রেজাল্টের কারণে যাদের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন যোগ্যতা পূরণ হয়নি বা রেজাল্ট তুলনামূলক খারাপ, তারা চাইলে পুনরায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজেদের রেজাল্ট ভালো করার চেষ্টা করতে পারেন। ফলাফল ভালো করে পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়া যারা উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে চান, তারা গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিট, রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারেন তারা। আর দ্বিতীয়বার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিতে হলে এক বছর শিক্ষাজীবন থেকে হারিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভেবেচিন্তেই শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করারও সুযোগ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ