মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার শেষ সপ্তাহে করণীয়, মানলে বাড়বে সাফল্যের সম্ভাবনা

চন্দ্রজিত সাহা
চন্দ্রজিত সাহা  © সংগৃহীত

[সমাজের অনেকের কটাক্ষ সঙ্গী হলেও থামতে জানেন না নরসিংদীর অদম্য তরুণ চন্দ্রজিত সাহা। জন্মের পর থেকেই তাঁর শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যায়। উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারেনি তাঁর পথচলায়। ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি ৮০.৫ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ২৩৮৭তম হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পড়ছেন শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজে। এবারের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন তিনি।]

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর)। পরের শুক্রবারই (১২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫–২৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। আর বাকি মাত্র ৬ দিন। সেদিন পরীক্ষায় যারা ভালো করবেন, মেধাতালিকায় থাকবেন, তারাই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন। স্বপ্নপূরণের দিন যখন সমাগত, তখন আমাদের কী করা উচিত? আমার অভিজ্ঞতা থেকে সেগুলো তুলে ধরছি কিছু পরামর্শ। আশা করি, অনেকে উপকৃত হবেন।

আশা করি, আপনাদের পেপার ফাইনাল, সাবজেক্ট ফাইনাল সবকিছু শেষ করে মডেল টেস্ট পরীক্ষাগুলো দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে আপনি প্রতিদিন ৩টা পরীক্ষা দেবেন। আমি দুইটা মডেল টেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করতাম (যদিও সব দিন ২টা দেওয়া হতো না), আর সঙ্গে প্রশ্নব্যাংক থেকে পূর্বের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর ওপর পরীক্ষা দিতাম। যদি আপনার পূর্বের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে সলভ করা না হয়ে থাকে, তাহলে আপনিও এভাবে ১টা বা ২টা পরীক্ষা পূর্বের প্রশ্ন থেকে দিতে পারেন। পরীক্ষায় নম্বর খারাপ আসলেই যে মূল পরীক্ষায় কম আসবে এমন কোনো কথা নেই। সবসময় টার্গেট থাকতে হবে যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমি ভেঙে পড়ব না।

কোনোভাবেই নম্বর বাড়ছে না কেন

দেখুন, প্রথমে আপনি পেপার ফাইনাল দিন, এরপর সাবজেক্ট ফাইনাল, এরপর মডেল টেস্ট। এখন সবকিছু পড়ে পরীক্ষা দেওয়া কোনোদিনই সম্ভব না। পরীক্ষার আগে রিভিশনের ক্ষেত্রে দুটো জিনিসকে গুরুত্ব দেবেন।

১) আপনার পূর্বে গ্যাপ আছে এমন অধ্যায় বা টপিক।
২) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বা টপিক, যেগুলো ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অসম্পূর্ণ।

এ মুহূর্তে নেতিবাচক চিন্তা আসা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যখনই এমন চিন্তা আসবে, তখনই চোখ বন্ধ করে ভাববেন, ‘এই তো আর অল্প কিছুদিন, এর পরই আমার স্বপ্ন সাদা অ্যাপ্রন, আমার হতে চলে আসবে।’

আরও পড়ুন: শারীরিক প্রতিকূলতাকে জয়, সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে মেডিকেলে অভাবনীয় সাফল্য

সর্বোপরি সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করা। এর কোনো বিকল্প নেই। আপনি সৃষ্টিকর্তার নিকট চান, কান্নাকাটি করেন। সবকিছুর মালিক সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা। তিনি আপনার সঙ্গে থাকলে, আর যদি আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিয়ে থাকেন, তাহলে কোনো বাধাই আপনাকে আটকাতে পারবে না।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ও পরীক্ষার দিন সকালে করণীয়

পড়াশোনার ব্যাপারে যদি বলি, সেদিন রাতের জন্য কোনো পড়া রাখা যাবে না। রাতে আমি যা করেছিলাম (যতটুকু মনে পড়ে) তা হলো—অনুজীব, জীবের বংশবিদ্যা এই অধ্যায়গুলো দেখেছিলাম, আর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ছকগুলো একবার দেখে নিয়েছিলাম। পরীক্ষার দিন সকালে আমি Parts of Speech থেকে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে পরীক্ষার আগের রাত আর পরীক্ষার দিন সকালের এই পড়া থেকে আমার অনেক কিছু কমন পড়েছিল।

সেদিন রাতে আর পরীক্ষার দিন সকালে আমি অনলাইন কোচিংয়ের দুইটা কনফিডেন্স বুস্ট পরীক্ষা দিয়েছিলাম, যেগুলোতে আমার ৯৫%+ মার্ক ছিল। সেদিন রাতে এবং পরীক্ষার দিন সকালে আপনার যা ইচ্ছে তাই পড়বেন (গুরুত্বপূর্ণ ছক, আপনার দুর্বল টপিক, বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ)। পারলে একেবারেই সহজ প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন যেন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

পরীক্ষার যাবতীয় জিনিসপত্র পরীক্ষার আগের রাতেই গুছিয়ে রাখবেন। HSC রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড (মূল কপি কোনোভাবেই ম্যানেজ করা না গেলে ফটোকপি নিলেও হবে), মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, পর্যাপ্ত কলম ও পেন্সিল—এগুলো নিতে হবে। হাতঘড়ি নেওয়া যাবে না।

যাদের বাসা দূরে, আপনারা একদিন আগে কেন্দ্রের আশপাশে গিয়ে থাকতে পারেন। বাসা কাছে হলেও পরীক্ষার দিন সকালে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন। কারণ সেদিন সব জায়গায়ই যানজট থাকবে। পরীক্ষার দিন সকালে নাস্তা করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। মস্তিষ্কের খাবার হলো গ্লুকোজ। তাই গ্লুকোজ খেয়ে বের হবেন সেদিন সকালে। এতে করে পরীক্ষার সময় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে।

আর কিছুদিন পরেই আপনার পদচারণায় মুখরিত হবে দেশের মেডিকেল কলেজগুলো। আপনাদের জন্য শুভকামনা।

চন্দ্রজিত সাহা: এমবিবিএস (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।


সর্বশেষ সংবাদ