মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি

শেষ সময়ে কাজ দুটি—এক. বারবার রিভিশন, দুই. প্রশ্ন সমাধান

ডা. মাইনুল হাসান
ডা. মাইনুল হাসান  © সংগৃহীত

আর অল্প কিছুদিন পরই একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ সেশনের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা। একই দিন, একই সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শেষ সময়ে চিন্তিত না হয়ে সামান্য কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব।

বারবার রিভিশন ও প্রশ্ন সমাধান
শেষ সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, সে আগে যে পড়াশোনাগুলো করেছে গত কয়েক মাসে, এটাকে রিভিশন করা। বারবার রিভিশন দেওয়া। নতুন কিছু এখন পড়ার চেয়ে পুরাতন পড়াটা রিভিশন দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি, যেহেতু এখন পরীক্ষার সময় চলে এসেছে, এজন্য বারবার এমসিকিউ প্র্যাকটিস করা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পুরোটাই এমসিকিউতেই হয়। একই সাথে প্রশ্নগুলোর সমাধান করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: অ্যাডমিশন টেস্ট ভাগ্যের খেলা, দেড় ঘণ্টা ভালো ব্যাট করলেই সফলতা

দেখা যায় শেষ সময়ে এসে অনেক শিক্ষার্থীই হতাশ হয়ে যায়। কারণ বিভিন্ন কোচিংয়ে তারা পরীক্ষা দেয়, এতে অনেকের মার্কস হয়তো আশাব্যাঞ্জক হয় না। তখন তারা হতাশ হয়ে যায় যে আসলে সে পরীক্ষায় পারবে কিনা। কিন্তু একটা ব্যাপার সবার মাথায় রাখা উচিত, মেডিকেল পরীক্ষায় ওই এক ঘন্টা ১৫ মিনিট সময় যে ভাল করতে পারবে, সে-ই চান্স পাবে। আমরা অনেককেই দেখেছি, কোচিংয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় অনেক ভাল মার্কস পায়, কিন্তু পরীক্ষায় চান্স পায় না। আবার অনেকে কোচিংয়ে কম পায়, তারা মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায়। এজন্য শিক্ষার্থীদের উচিত হচ্ছে এই সময়ে রেগুলার পরীক্ষা দেওয়া। এতে যে প্রশ্নগুলো সে ভুল করেছে সেগুলো যেন সমাধান করে।

এক বিষয় নিয়ে বসে থাকা কাঙ্ক্ষিত নয়
সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে- এই সময়ে একটা সাবজেক্ট নিয়ে অনেকক্ষণ বসে না থেকে বা ডিপলি পড়ার চেয়ে সহজগুলো যতবার রিভিশন দেওয়া যায়। মেডিকেল পরীক্ষায় বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, সাধারণ জ্ঞানের ভিতরে এখন আবার মানবিক গুণাবলী এবং প্রবণতা যোগ করা হয়েছে, ইংলিশও আছে। অনেকগুলো সাবজেক্ট-টপিক আছে। শিক্ষার্থীরা কোন একটা সাবজেক্ট যখন ভাল করে পড়াশোনা করে, দেখা যাচ্ছে বাকি সাবজেক্টগুলো গুরুত্বহীন করে ফেলে। বিশেষ করে সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরেজি এবার ৩০ মার্কস, যেটা সবচেয়ে বেশি, বায়োলজির সমান। দেখা যায় শিক্ষার্থীরা অন্যগুলো অনেক ভালো করে পড়াশোনা করে কিন্তু ইংলিশ এবং সাধারণ জ্ঞান খুবই অবহেলা করে। এজন্য শেষ সময়ে এসে সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোতে নজর দেওয়া এবং ইংলিশের যে পড়াশোনাগুলো তারা করেছে আগে, সেগুলোই বারবার দেখা বেশি ইম্পর্টেন্ট।

আরও পড়ুন: মেডিকেলে একটি সিট নিশ্চিত করার সহজ উপায়

মানবিক গুণাবলীর জন্য মডেল হতে পারে বিসিএসের প্রশ্ন
যেহেতু মেডিকেল এডমিশন পরীক্ষায় মানবিক গুণাবলীর বিষয়টা আগে ছিল না, আমাদের হাতে মডেল যেটা আছে, সেটা হচ্ছে বিসিএসের বিগত বছরের প্রশ্ন। বলা হয়েছে, তারা প্রশ্নগুলো করবেন মেডিকেল রিলেটেড, সিনারিও বেইজড। একজন ডাক্তার হওয়ার পরে আপনার ভিতরে কী মানবিক গুণাবলী থাকা দরকার, আপনার চেম্বারে একজন রোগী আসবে- রোগী আসার পরে আপনার ব্যবহার-এটিটিউড কেমন হবে, এই প্রশ্ন তারা করে থাকবেন। এ বছর সময় বাড়িয়ে এক ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট করা হয়েছে। তারা বারবার বলেছে যে শিক্ষার্থীরা যেন একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিতে পারে এজন্য সময়টা বাড়িয়েছে। আমরা ধারণা করছি, প্রশ্ন সহজই হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা করতে হবে, একটু চিন্তা করে নিজেদের থেকে উত্তর বের করতে হবে। আমার বিশ্বাস, শিক্ষার্থীরা যদি নিজের কমনসেন্সটা এপ্লাই করতে পারে, তাহলে যদি এখান থেকে পাঁচটা প্রশ্ন আসে- তিন বা চারটা প্রশ্ন খুব সহজেই তারা উত্তর করতে পারবে।

একই প্রশ্নপত্রে এমবিবিএস-বিডিএসের পরীক্ষা, চিন্তার কিছু নেই
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এবার একই প্রশ্নপত্রে মেডিকেল এবং ডেন্টাল পরীক্ষা হচ্ছে, তবে এখানে আসলে খুব বেশি চিন্তার কিছু নাই। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ আমি দেখি না। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে এমবিবিএস-বিডিএস আলাদা পরীক্ষা হচ্ছিল, তার আগেও কিন্তু একসাথেই ছিল। একই প্রশ্ন হওয়া থেকে একটা সুবিধা হবে। আগে অনেক শিক্ষার্থী এমবিবিএসে চান্স পাওয়ার পরে তারা আবার বিডিএস পরীক্ষা দিত। যার কারণে যাদের শুধুমাত্র বিডিএস টার্গেট ছিল, তারা হয়তো কোনো কারনে চান্স পেত না। কিন্তু এবার যারা এমবিবিএস চান্স পেয়ে যাবে, তারা বিডিএসে চান্স পাচ্ছে না। বিডিএস এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা দখল করতে পারবে না, বা ওভারল্যাপ হবে না। এ ছাড়া দেখা যেত, এমবিবিএস-বিডিএস দুইটা পরীক্ষা আলাদা আলাদা সময় দেয়। এতে মেডিকেল পরীক্ষা দেওয়ার পরে যেহেতু দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ পর ডেন্টালের পরীক্ষা হত, শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে যেত এবং পড়াশোনা করতে পারত না। এজন্য আমার কাছে মনে হয়, এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত।

লেখক: শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রেটিনা মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের প্রশিক্ষক।


সর্বশেষ সংবাদ