ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন
- মোহাম্মদ রনি খাঁ
- প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২২, ০৬:১৫ PM , আপডেট: ২৫ জুন ২০২২, ০৮:০৭ PM
আবু রায়হান। বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। ক’দিন আগেও পড়াশোনা ঠিকঠাক চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটেও পরীক্ষাও ভালোভাবে সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই বন্যায় রায়হানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন যেন এখন দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। পড়াশোনা তো হচ্ছেই না, দু’বেলা খাবার মেলাও যেন এখন ভার।
শুধু সুনামগঞ্জের রায়হানই নয়, এমন অবস্থা সিলেট, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ অন্তত ৯টি জেলার ভর্তিচ্ছুদের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, বন্যা কমে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরা এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় পড়াশোনা করত পারছেন না। সবকিছু ঠিক হতে কতদিন সময় লাগবে, সেটাও তারা জানেন না।
তথ্যমতে, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শনিবার (২৫ জুন) শেষ হচ্ছে। এদিন দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এই আবেদন প্রক্রিয়া চলবে। এর আগে গত ১৫ জুন থেকে এই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গুচ্ছের টেকনিক্যাল সাব কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ তিনটি ইউনিটে সর্বমোট ২ লাখ ৪৭ হাজার ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ‘ক’ ইউনিটে ১ লাখ ৪০ হাজার, ‘গ’ ইউনিটে ৩২ হাজার এবং ‘খ’ ইউনিটে ৭৫ হাজার ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছেন।
কুড়িগ্রামের নয়ন নামে এক ভর্তিচ্ছু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে মেইল করে জানিয়েছেন, যেখানে বেঁচে থাকতে প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে; সেখানে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। এমন অবস্থা কবে স্বাভাবিক হবে সেটাও তারা জানে না। বন্যার পানি নেমে গেলেও সবকিছু স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগতে পারে। এই অবস্থায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অন্তত এক মাস পেছালে তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
নোমান বাবু নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, সিলেটে এমন অনেক পরীক্ষার্থী আছে, যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া তো দূরের কথা, নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সময় একমাস পেছানো হলে, কিছুটা হলেও প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: রাবির দুই ধাপে চূড়ান্ত আবেদন ১ লক্ষ ৫৯ হাজার
মাসুম বিল্লাহ নামে একজন দাবি করেন, এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা যদি পেছাতে পারে, তবে সিলেট-সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের জন্যেও ভর্তি পরীক্ষা কয়েকদিন পেছানো উচিৎ।
রাতুল দাস নিলয় নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, সিলেটসহ নানা জায়গায় শিক্ষার্থী গুলো কি পড়ার সুযোগ পাবে না। তাদের মতো পরিস্থিতি যদি আপনারা পড়তেন তাহলে কি করতেন। তাদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। শিক্ষা যদি মৌলিক অধিকার হয় তাহলে রাবি, জাবি, গুচ্ছ সেই সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করছে। তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত এবং এটা তাদের অধিকার আর আজ যারা এমন সিদ্ধান্ত জন্য পরীক্ষা দিতে পারবে না তারা দেশটার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভালোবাসোতে পারবে তো?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আশা করছি, খুব দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি আমার একার না। এটা একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আমার একার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না।
প্রসঙ্গত গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়; শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।