‘শিক্ষার্থীরা যতবার চায় ততবার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে’

দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ  © ফাইল ছবি

আগামী বছর গুচ্ছে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকছে না- শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের এমন বক্তব্যের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে সরব হন। সেই দাবির সাথে এখন দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের দাবি উঠেছে।

যদিও গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আগামী বছর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন।

এদিকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে আবারও সরব হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন ভাবে নিজেদের দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এছাড়া নিজেদের দাবি আদায়ে আরও বড় কর্মসূচির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন: ইংরেজি-সাধারণ জ্ঞান ছাড়াই হতে পারে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাবিসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। তাহলে কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি কেন মানবে না। ‘শিক্ষার্থীরা যতবার চাইবে ততবার তাদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।’

ওই সমাবেশ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছিলে। সমাবেশ শেষে পরবর্তীতে আরও বড় ধরনের কর্সূচির আভাসও দিয়েছেন তারা।

দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবি অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বক্তব্যের পর। তবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখার সম্ভাবনা থাকায় এই দাবিতে আরও জোরালো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন: সাত কলেজে ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ ১০ জানুয়ারি

এ প্রসঙ্গে গুচ্ছে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরতদের অন্যতম সমন্বয়ক শহিদুল সর্দার সুমন জানান, আগামীতে গুচ্ছে যেন দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ থাকে সেজন্য গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯জন উপাচার্য স্যারের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। স্যাররা আমাদের কথা শোনার পর সবাই এ বিষয়ে পজিটিভ রেসপন্স করেছেন।

তিনি আরও জানান, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন আমাদের এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে জানানো উচিত। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি মেনে নেয় তবে আমরা আন্দোলনে যাবো না। তবে দাবি না মানলে আমরা স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেব। তবে আশা করছি আমাদের অভিভাবকরা আমাদের আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেবে না।

গুচ্ছসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার যে দাবি উঠেছে তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের একবার সুযোগ দেয়া কোনো ভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন: ত্রাণের নামে টাকা তুলে ম্যাজিস্ট্রেটের আত্মসাৎ

ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অনেকবার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আমাদের দেশেই কেবলমাত্র এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। শিক্ষামন্ত্রীও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার পক্ষে। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের এই দাবি মেনে নেবে।

এদিকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা না রাখার পেছনে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখানো যুক্তিগুলোই গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে নিয়ে আসছেন।

ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ থাকলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায়। যার চাপ সামলানোর সামর্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশানের নেই। সেকেন্ড টাইমের কারণে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে যায়। এছাড়া যারা প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা বঞ্চিত হন। তাই দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ছেলের পর একই কলেজ থেকে এসএসসি পাস করলেন বাবা

এ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেক গবেষণা করে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে সেসময় এটি বন্ধ করা হয়। ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটিই চূড়ান্ত। যেভাবে চলে আসছে আগামীতেও সেভাবেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ