শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির মধ্যেই রোববার শুরু হচ্ছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ফটো

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের যতটা না সন্তুষ্টি রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির মধ্যে রেখেই আগামী রোববার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২০টি সাধারণ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এদিন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবার ২৮টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনের ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। পরীক্ষা গ্রহণে সব ধরননের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিতরা বলছেন, অটোপাসের কারণে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ২০২০-২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের ফল খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা হলে তাদের ফল আরও ভালো হতো। অধিক সংখ্যক জিপিএ-৫ ও পেত না। এতে করে সবাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত।

তারা বলছেন, করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে তারা মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছেন। তার উপর গুচ্ছ কমিটির একের পর এক হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে মানসিক বিপর্যয়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছেন তারা। এই অবস্থায় আত্মহত্যার মতো গুরুতর পদক্ষেপও নিতে পারেন কেউ কেউ। ১২ বছর ধরে পড়ালেখা করার পর ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ার চেয়ে কষ্টের আর কি আছে?

বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী নাজনিন জেমি জানান, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি প্রথমে বলল তারা প্রতি ইউনিটে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেবেন। আমরা সেটি মিনে নিলাম। পরে তারা ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সিলেকশন করলো। এই সিলেকশন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা বিরোধ করে আসছিল। তবে গুচ্ছ কমিটি শিক্ষার্থীদের কোনো কথাই আমলে নেয়নি।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা মিম বলেন, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগে যারা আবেদন করেছে তারা সকলেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অথচ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। মেধার মূল্যায়ন কি কেবল জিপিএ-৫ দিয়েই হয়ে থাকে। পূর্বে অনেক ভর্তি পরীক্ষায় ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে। অন্যদিকে কম জিপিএ পেয়েও অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছে। আমরা অটোপাসের বলি।

শুধু সিলেকশন প্রক্রিয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট নন; বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া নিয়েও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। বিসয়টি সমাধানে আদালত পর্যন্ত গেছেন ভর্তিচ্ছুরা। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। যদিও আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে গুচ্ছ কমিটি।

এ প্রসঙ্গে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যতটা না শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করেছে, তার চেয়ে বেশি হতাশার তৈরি করেছে। প্রথম থেকেই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে একের পর এক পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের চরম বিপর্যস্ত করা হয়েছে । ২০১৬ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গত বছরও গুচ্ছতে থাকা অন্তত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এবছর সে সুযোগটি নেই। যার কারণে হতাশায় ভুগতে হচ্ছে ২০১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সহ বহু সেকেন্ড টাইমারদের।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সবাইকে সন্তুষ্ট করার জন্য বসে নেই। সবাই সবকিছুতে সন্তুষ্ট থাকবেও না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসাতে পারবে না। সেখানে আমরা ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিচ্ছি। এটা কম সংখ্যা না। আমাদের এর চেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি নেই।

বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট সম্পর্কে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ার। এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মেনে নিবো।


সর্বশেষ সংবাদ