ভর্তি যুদ্ধ: বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ে ভুল করছেন না তো!
- শিউলি রহমান ও এমটি রহমান
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ PM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ PM
ক’দিন পরই দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হচ্ছে। সেজন্য ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে মেডিকেল কলেজও। সবমিলিয়ে এই সময়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা তাদের শেষ সময়ের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন; যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। তবে এই সময়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম, ভর্তি হতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। ‘বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ নয়’ তাই ভর্তি আবেদন করব না- বেরিয়ে আসতে হবে এমন চিন্তা-ধারা থেকেও।
যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনে উচ্চশিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ এর মাধ্যমেই তিনি কর্মজীবনে কী করবেন বা কতটুকু সফল হবেন, তা অনেকাংশে নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে নিজের জন্য সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রী কী বিষয়ে পড়তে চান বা কোন অনুষদের বিষয়ে ভর্তি হতে চান। দেখা যায় যে, একেক ধরনের বিষয়ে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো পড়াশোনা হয়। আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সামগ্রিকভাবে সব বিষয়ে পড়াশোনার মান ভালো। এসব দিক বিবেচনা করে নিজের জন্য সবচেয়ে সহায়ক বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করতে হবে।
অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের এলাকা প্রাধান্য দেন। কেউবা শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে চান। অনেকে ভর্তির পরের আর্থিক বিষয়গুলোও চিন্তা করেন। কারণ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট রয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুদিন বাইরে বেশি খরচ করে থাকতে হয়, যেটি অনেকের সামর্থের মধ্যে থাকে না। এ বিষয়েও চিন্তাভাবনা করার সুযোগ রয়েছে।
মনে রাখতে হবে, শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় রাখা চলবে না। কারণ, এখন যোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদ্বন্দ্বীও বেশি। তবে আশার কথা, এখন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। সুতরাং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় রেখে যে কোনো একটিতে ভর্তি হয়েই সফল হওয়া সম্ভব।
এসব কিছু বিবেচনা করেই নিজের জন্য সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি বাছাই করতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় রাখা চলবে না। কারণ, এখন যোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদ্বন্দ্বীও বেশি। তবে আশার কথা, এখন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। সুতরাং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় রেখে যে কোনো একটিতে ভর্তি হয়েই সফল হওয়া সম্ভব।
এখন প্রতিটি দিন, প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে যে খুব প্রস্তুতি ছিল, তা নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক ঘণ্টা করে পড়েছি। আর কোচিংয়ের ক্লাসগুলো নিয়মিত করেছি। তবে কোচিংয়ের পরীক্ষাগুলোয় শতাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আমার অবস্থান থাকতো ৫০-এরও ওপরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নিয়মে নেওয়া কোচিংয়ের ওই পরীক্ষায় এভাবে পিছিয়ে থাকা মানে চান্স না পাওয়ার সম্ভাবনা কম, আমার মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল তখন। তবে আমার সেই বিশ্বাস বদলে দিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। তারা আমাকে বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিটা অবশ্যই জরুরি। তবে তারচেয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা আমাকে বলেছিলেন, সেটি থাকলেই প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। সেটি হলো, ‘আত্মবিশ্বাস’। এটিই আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বড় ভূমিকা রেখেছিল আমার ক্ষেত্রে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কোচিং বা মডেল টেস্টের মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয় সবদিক বিবেচনা করেই। ফলে অতটা জটিল হয় না, মানসম্মত প্রশ্ন করা হয়। সে কারণে কোচিং বা মডেল টেস্টের প্রশ্নে হতাশ না হয়ে প্রস্তুতি ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।’
তৌহিদ বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কোচিং বা মডেল টেস্টের মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয় সবদিক বিবেচনা করেই। ফলে অতটা জটিল হয় না, মানসম্মত প্রশ্ন করা হয়। সে কারণে কোচিং বা মডেল টেস্টের প্রশ্নে হতাশ না হয়ে প্রস্তুতি ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।’
আরও একটি বিষয় হলো, পরীক্ষা শুরুর আগে অনেকে ঘাবড়ে যান। কি প্রশ্ন আসবে? কেমন পরীক্ষা নেবে? আমি চান্স পাব তো? এমন নানা ধরনের প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। পরীক্ষার আগে এসব চিন্তা বাদ দিতে হবে। শুধু আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, যে প্রশ্নই আসুক, আমি পারব।
আর বিশ্ববিদ্যালয় তো একটি নয়। অনেকগুলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় এখন রয়েছে। একটিতে না হলে আরেকটিতে হবে। তো ঘাবড়ে যাওয়ার কী আছে? এভাবে যদি মনটাকে পরীক্ষার আগে ফ্রেশ রাখা যায়, তাহলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। আমার ক্ষেত্রে এ কাজটিই হয়েছিল। পরীক্ষার দিন নিজে খুবই স্বাভাবিক থাকা আমার চান্স পেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষাটা দিতে পেরেছিলাম।
তৌহিদের ভাষ্য, এখন প্রতিটি দিন, প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিটা এখন ভালোভাবে নিলে আর আত্মবিশ্বাস রাখলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।
সর্বশেষ কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি জটিল কিছু নয়। অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের জন্য সবদিক খেয়াল রেখে সেরাটাই বাছাই করতে হবে। তবে মূল কথা হলো, যে বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হন না কেন, যদি নিজে ভালো পড়াশোনা করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করা যায়, তাহলে কর্মজীবনে সাফল্য লাভের পথে কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।