দাবি মেনে নেয়ার পরও থামেনি চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

দাবি মেনে নেয়ার পরও থামেনি চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
দাবি মেনে নেয়ার পরও থামেনি চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন  © ফাইল ছবি

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা এবং হেনস্তার প্রতিবাদে দফায় দফায় চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত রবিবার (১৭ জুলাই) রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে এক ছাত্রীকে হেনস্তার পরে ভিডিও ধারণ এবং মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

চবি ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনার পর তিনি বিস্তারিত তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে ঘটনার গত চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন কাউকে শনাক্ত করতে না পারেনি। প্রশাসন কাউকে শনাক্ত করতে না পারলেও গতকাল বুধবারে হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাতনামা পাচঁজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক শারীরিক হেনস্তা করেন অজ্ঞাত পাঁচজন যুবক। একপর্যায়ে দুজন কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের মারধর করেন। পরে তাঁদের মানিব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেন। পরে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।

এনিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এদিকে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার পর নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে মেয়েদের রাত ১০টার মধ্যে আবাসিক হলে প্রবেশ করার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্র উপদেষ্টার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: চবিতে কী হয়েছিল সেই রাতে?

তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন ছাত্রীরা। ছাত্রীদের বক্তব্য, তাদের উত্ত্যক্ত এবং হেনস্তা করেছে ছেলেরা। সুতরাং ব্যবস্থা নিতে হলে ছেলেদের হলেও দশটায় প্রবেশের নিয়ম চালু করতে হবে। এছাড়াও তারা, ক্যাম্পাসের সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।

এ দাবি নিয়ে গতকাল বুধবার রাত দশটা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। চার দফা দাবি নিয়ে চলে তাদের আন্দোলন।

তাদের দাবিগুলো ছিল- এক. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশের সময়সীমা তুলে নেয়া ও ক্যাম্পাসে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুই. যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করতে হবে। এবং গঠিত সেলে বিচার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ সময় থাকবে একমাস। এক মাসে বিচার নিশ্চিত করণে ব্যর্থ হলে যৌন নিপীড়ন সেল নিজে শাস্তির আওতাভুক্ত হবে।

তিন. যৌন নিপীড়ন সেলে বর্তমান চলমান কেইসগুলো আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে সমাধান করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চার. বর্তমানে চলমান ঘটনাগুলোর বিচার আগামী ৪ কার্যদিবসের মধ্যে করতে না পারলে প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।

ছাত্রীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিত্রে লিখিত আকারে পেশকৃত এসব দাবি মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান। বুধবার দিবাগত রাতে আন্দোলনত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, এসকল সমস্যা চার কর্মদিবসের মধ্যে মীমাংসা না করতে পারলে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবেন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে তা পূরণের আশ্বাসেও থামছে না শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) তিন দফায় শিক্ষার্থীরা প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করেন। সকাল ১১টায় বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রথম দফায় আন্দোলন শুরু করেন।

নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং দোষীদের বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় দফায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সব শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন । এতে কয়েকজন শিক্ষকও যোগ দেন।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও বিচার করতে পারেনি প্রশাসন। শুধু এঘটনা নয়, এর আগেও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে ক্যাম্পাসে। তবে কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। তাই তারা এ ঘটনার বিচার হবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দিহান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যুক্তি, আগের ঘটনার বিচার না হওয়ায় প্রশাসনের আশ্বাসে রাখতে পারছেন না।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, এমন নিকৃষ্ট ঘটনার বিচার চার ঘন্টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা চারদিনেও হয়নি। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিভাবক বলে জানেন। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চবিতে একটি নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। এছাড়া তারা যে দাবি জানিয়েছেন সেগুলোও মেনে নেয়া হয়েছে। এরপরও শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলন করছে বুঝে আসছে না। তবে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রশাসন বাধা দেবে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence