চবিতে কী হয়েছিল সেই রাতে?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে বিষয়টি তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। তবে পুলিশের তদন্তে এখনো কোনো কিছু সামনে আসেনি।

গত রবিবার (১৭ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুর পাড়ে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও ঘটনাস্থল পুকুর পাড়ই কিনা- এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। হেনস্তার শিকার শিক্ষার্থী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর জমা দেওয়া অভিযোগপত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের সংলগ্ন এলাকা (হতামার মোড়) থেকে ওই ছাত্রী তার বন্ধুকে নিয়ে হলে ফিরছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন যুবক এসে তাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়।

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী জানান, ‘আমাকে এবং আমার বন্ধুকে বিনা কারণে অযাচিতভাবে মারধর করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছেনে ঝোপঝাড় নির্জন এলাকায় নিয়ে যায় এবং আমার গায়ে কাপড় খুলে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে এবং সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে যেতে চায়।’

আরও পড়ুন: রাবি ভর্তি: ছাত্রাবাসে অভিভাবক থাকতে লাগবে ৫০০ টাকা!

ছাত্রীর অভিযোগ, বিষয়টিতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে এবং শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। পরে  সুবিধা করতে না পেরে ওই ছাত্রী এবং তার বন্ধুর মানিব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক এবং চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার আলামত সংগ্রহ শুরু করেছি। ভুক্তভোগী ছাত্রী এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছি। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার সাথে জড়িতরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। অভিযোগ রয়েছে তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও বগিভিত্তিক ‘সিএফসি’ গ্রুপের কর্মী। 

শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ আরও উস্কে দিয়েছে চবি ছাত্রলীগের সভাপতিকে শোকজের ঘটনা। ঘটনার একদিন পর গত মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে রেজাউল হক রুবেলকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে ঠিক কি কারণে তাকে শোকজ করা হয়েছে সে বিষয়ে শোকজপত্রে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবির এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগত কেউ এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারবে না। এই ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারে। তবে ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় এটি প্রকাশ্যে বলা যাচ্ছে না।

চবি ছাত্রলীগ সভাপতিকে শোকজের বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ছাত্রলীগ জড়িত কিনা সেটি এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক তদন্তে এবং ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে ঘটনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জড়িত থাকতে পারে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

পুলিশের বক্তব্য

এদিকে হেনস্তার ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমস আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। মামলা দায়েরের পরপরই বিষয়টি তদন্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চবি ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।

ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক তদন্তে এমন কিছু পেয়েছেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ জড়িত নাকি অন্য কেউ আমরা সেটি দেখছি না। আমরা এই ঘটনাকে ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে দেখছি। ঘটনার সাথে কারা জড়িত সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। 


সর্বশেষ সংবাদ