ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলে বির্তক ঘরে-বাইরে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:২৬ AM , আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩১ AM
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সাধারণ ভর্তি কমিটির এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন এটি আসন্ন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চূড়ান্ত করা হবে।
এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। এই কাতারে শামিল হয়েছেন খোদ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অনেক শিক্ষকও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তর্ক-বির্তক।
তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের পর কীসের ভিত্তিতে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল— এটি কতটা যোক্তিক সিদ্ধান্ত। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কতটা বেড়েছে তা জানা জরুরি। ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল হলে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে। তাই এ সিদ্ধান্তের আগে কর্তৃপক্ষের আরেকটু ভাবার দরকার আছে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ’ক ইউনিটে, মানবিকের শিক্ষার্থীদের ‘খ’ ইউনিটে, বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের ‘গ’ ইউনিট, বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ’ঘ’ ইউনিট এবং চারুকলার জন্য ’চ’ ইউনিটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হত।
‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে মূলত বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিকের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের বিষয়গুলোতে এতোদিন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতেন।
‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করা হলে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ঘ ইউনিট বাতিল করা হলে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে। কারণ এইচএসসি পাশের পর বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা মেডিকেল, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার চতুর্থ সুযোগ হলেও মানবিক ও ব্যবসায় শাখার জন্য ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে যথাক্রমে ‘খ’ ইউনিট ও ‘গ’ ইউনিটের পর ‘ঘ’ ইউনিট দ্বিতীয় সুযোগ। ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা না হলে মানবিক ও ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থীদের ঢাবিতে কেবল একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়ে যায়, যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
“কোন কারণে যদি মানবিক ও ব্যবসায় শাখার কোন শিক্ষার্থী ‘খ’ ও ‘গ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে না পারেন অথবা অসুস্থতাজনিত বা যে কোন কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়ে যায় তাহলে মেধাবী কোন শিক্ষার্থীরও ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন বাতিল হয়ে যাবে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও নাই। তাই ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের মাধ্যমে আমাদের মানবিক ও ব্যবসায় শাখার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ এভাবে সঙ্কুচিত করার আগে আমাদের মনে হয় আরেকটু ভাবার দরকার আছে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম ফেসবুকে লিখেছেন, আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারত। এখন মাত্র একবার! পরের বার ‘ঘ’ ইউনিটটাও নাই হয়ে গেল! এভাবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত কতটা বিবেচনাপ্রসূত?
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিসের ভিত্তিতে কোন গবেষণার মাধ্যমে কী কারণে সব সিদ্ধান্ত নেয় সেটা আজও বোঝা হলো না! এই যে বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বিভাগ পরিবর্তনের ঘ ইউনিট আর থাকবে না, এর ফলে লাভটা কী হবে আমার জানা নেই। এই যে গত সাত বছর ধরে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কতোটা বেড়েছে জানা নেই। অথচ এসব প্রশ্নের উত্তর জরুরি। এ সংক্রান্ত গবেষণাও জরুরি।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজীব বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সমাজ ও পরিবারের চাপে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসএসসি ও এইসএসসিতে বিজ্ঞান কিংবা বাণিজ্য বিভাগে পড়ে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা ছিল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কোনো বিভাগে পড়া। ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে তা সম্ভব হত। এই ইউনিট বন্ধ হয়ে গেলে অন্য ইউনিটের শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ নাও পেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে আমরা অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটি চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সোমবারের সভায় আগের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন এটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চূড়ান্ত করা হবে।