ধর্ষণ মামলার বাদী সেই ঢাবি ছাত্রীকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা নুরের

ধর্ষণ মামলার বাদী সেই ঢাবি ছাত্রীকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা নুরের
ধর্ষণ মামলার বাদী সেই ঢাবি ছাত্রীকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা নুরের  © সংগৃহীত

ধর্ষণ মামলার বাদী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ আখ্যা দিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে অনশন করছেন। অসুস্থ হয়ে এরমধ্যে একবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে।

এর মধ্যে রোববার রাতে রাজধানীর মগবাজার ও আজিমপুর থেকে মামলার দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের এই দুই নেতা দীর্ঘ দিন নুরের রাজনৈতিক সহকর্মী, ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগের ওই মামলায় নুর নিজেও আসামি।

এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাতে পুলিশের ওই অভিযান চলার মধ্যে ফেইসবুক লাইভে এসে ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট কথা বলেন নুর।

মেয়েটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে নুর বলেন, “ভিক্টিমের পরিচয় তো ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের না কি ছাত্রী…। তার ভাই বলেছিল, নাজমুল হাসান সোহাগ তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। তাদের সাথে বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপোক্ত হয়েছিল।

“নাজমুল সোহাগের সাথে যে একটা ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে আপনারা দেখেছেন, লঞ্চের কেবিনে হাসিখুশিভাবে। যে লঞ্চের কেবিনে মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগটি এনেছিল, সেই লঞ্চের কেবিনে। একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্রাহীন। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায় একজন ছেলের সাথে বিছানায় গিয়ে, লঞ্চে হাসিখুশিভাবে।”

নিজের এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে নুর বলেন, “লঞ্চে পাশাপাশি কেবিন। লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণ করা সম্ভব? একটা চিল্লানি দিলে তো আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে যায়। তারপর ধর্ষণ করে তারা নিচে নামে নাই? সেখানে মানুষের কাছে বলতে পারত না? ভাই সোহাগ আমাকে ধর্ষণ করেছে, তাকে ধরেন।”
মেয়েটির অভিযোগ, একই বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী হওয়ায় এই পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ হয়। সেই সম্পর্কের জের ধরে ৩ জানুয়ারি লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ মামুন। তখন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ তার পাশে দাঁড়ান। চিকিৎসায় সহায়তা করার পর মামুনকে খুঁজে পেতে সাহায্যের কথা বলে চাঁদপুরে নিয়ে ফেরার পথে নাজমুল সোহাগও লঞ্চের মধ্যে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’। পরে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তিনি নূরসহ তাদের অপর সহকর্মীদের কাছে গেলে প্রথমে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করলে চরিত্রহননের’ ভয় দেখান।

তার অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নুরুল হক নূর বলেন, “ধর্ষণ করেছে জানুয়ারি মাসে। এতদিন মামলা করতে পারে নাই? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে পারে নাই? প্রক্টরের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে পারে নাই? থানায় একটা মামলা করতে পারে নাই? এগুলো অনেক বিষয় আছে।

“বেগম জিয়ার মতো নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাকে দুই কোটি টাকা না ছয় কোটি টাকার জন্য মিথ্যা মামলায় জেলে নিয়েছে। কাজেই সেখানে আমাদের কেউ হলে তো আর যুক্তি দিয়ে টিকবে না। যাই হোক, দেখা যাক। তবে আমাদের সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, ডাকসুর ভিপি নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ হিল বাকি এবং নাজমুল হুদা- এই চারজনের ঘটনার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।”

অপর দুই আসামির মধ্যে হাসান আল মামুন মেয়েটিকে চিনতেন বলে স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

নিজের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের বিষয়ে নুর বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, দুটি অভিযোগ তো প্রধান; তাকে আমি পতিতা বলে হুমকি দিয়েছি। যদি প্রমাণ করতে পারে, সেচ্ছায় ফাঁসি নেব। যদি প্রমাণ করতে পারে, তার সাথে আমার নীলক্ষেতে দেখা হয়েছিল বা মীমাংসার জন্য তার সাথে নীলক্ষেতে বসেছিলাম। এই দুটা অভিযোগের একটা যদি প্রমাণ করতে পারে, স্বেচ্ছায় ফাঁসি নেব। লাইভে এসে বললাম।”

হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে ভিডিওতে নুরুল হক নুর বলেন, “আমরা বার বার বলছি, আবারও বলছি, হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের দায়ভার আমরা নেব না। কারণ হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানি না। হাসান আল মামুন বলেছে, তারা একই বিভাগের ছাত্র, তার সাথে তার পরিচয় ছিল।কিন্তু ধর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কি না, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের কাছে কিছু বলেওনি। যেহেতু তার সাথে পরিচয় ছিল, সেখানে কিছু হতে পারে, সেটা একেবারেই উড়িয়ে দেব না।”

ফেইসবুক লাইভে এসে এসব বলার কারণ জানতে চাইলে নুর সোমবার রাতে বলেন, “যেই ঘটনার সাথে আমি জড়িত না, সেই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে যে আমার সম্মানহানি, আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, অবশ্যই তার ব্যক্তিত্ব, তার উদ্দেশ্য ও চরিত্র নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে পারি। তাছাড়া এতগুলো মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের পরিবারকে হয়রানি। এটা কোনো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না।”

আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গত পাঁচ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

তার অনশন নিয়ে নুর বলেন, “পৃথিবীর কোনো দেশে এমন অনশন দেখেছেন? ফ্যান চলে, স্যালাইন চলে, নাস্তার প্যাকেট, খাবার এবং সেখানে ছাত্রলীগ নেত্রীরা। ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ নেই তার পাশে। ছাত্রলীগ তাকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে। কাজেই তার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি। কোনো প্রমাণ ছাড়া আমার চরিত্রহনন করার চেষ্টা করছে, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই দিক থেকে আমি যা বলেছি তা যথাযথ, অবান্তর কিছু নয়।”

সাইফুল ও নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ জানালেও নুর বলেছেন, তাদের সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনসহ তিনজনের খোঁজ পাচ্ছেন না। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ হিল বাকি, তিনজনেরই কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। তারা যদি নিরাপদে থাকত তাহলে একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে হলেও জানাত। আমার মনে হয়, তাদের গুম করা হয়েছে। কারণ গতকালও ওই দুজনকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পরদিন গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।”

এদিকে আসামিদের দুজন গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

সোমবার রাতে অনশনস্থল থেকে তিনি বলেন, “আজকে পঞ্চম দিনের মতো এখানে অনশন করছি। দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং দুজনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বিজ্ঞ আদালত। শুরুতে হতাশ হলেও এখন আমি কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। তবে ছয়জন আসামির প্রত্যেককে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমি এই রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন আসামি বাইরে আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখানে অবস্থান করব।”

এখন অনশন না কি অবস্থান কর্মসূচি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুরুতে ২৭ ঘণ্টা টানা অনশন করেছিলাম। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট ও স্যালাইন দেওয়ায় হয়। এখন খাবার না খেলেও স্যালাইন চলছে। ফলে কিছুটা সুস্থ আছি।”


সর্বশেষ সংবাদ