ঢাবিতে অনুষ্ঠিত হলো ১১তম মানবাধিকার সম্মেলন

ঢাবিতে মানবাধিকার সম্মেলন
ঢাবিতে মানবাধিকার সম্মেলন  © টিডিসি ছবি

মানবাধিকারের সুরক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও একটি মানবিক সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে আজ শনিবার (২২ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১তম মানবাধিকার সম্মেলন। সম্মেলনে ব্যক্তি-স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গুম, খুন বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী নির্যাতন এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহিতাসহ মানবাধিকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার বাস্তবায়ন একটি কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। কেবল আইন করলেই হয় না, সৎ ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং নিজেদের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ—নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগ—সংস্কার না হলে মানবাধিকার রক্ষা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন: গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ক বুক কর্নার উদ্বোধন

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ একরামুল হক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)–এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ও এইচআরএসএস-এর প্রধান উপদেষ্টা মো. নূর খান, এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের (UNRCO) সিনিয়র হিউম্যান রাইটস অ্যাডভাইজার হুমা খান।

সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। শহীদ সামিউ আমান নূরের বোন আফরিন আমান, শহীদ নাইমা সুলতানের মা আইনুন নাহার, এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি তাদের সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে আবেগঘন বক্তব্য দেন। গুম থেকে ফিরে আসা ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম আরমান এবং মাইকেল চাকমা তুলে ধরেন তাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘মানবাধিকার কোনো নির্দিষ্ট দলের বিষয় নয়, এটা সার্বজনীন। নাগরিক, শ্রমিক বা পাহাড়ি—সবার অধিকার রক্ষা করতে হবে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।’

ড. মুহম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘মানবাধিকার বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা যেন দলের নয়, আইনের শাসনের প্রতি অনুগত হয়, সেটাই কাম্য।’

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএস-এর প্রধান উপদেষ্টা মো. নূর খান বলেন, ‘মত ও চিন্তার ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে মৌলিক অধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। অতীতের স্বৈরাচারী আচরণ থেকে আমাদের বের হয়ে এসে মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

সম্মেলনের শুরুতে এইচআরএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবাধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিত অনুসন্ধান ও নথিভুক্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, ভিকটিম সাপোর্ট ইউনিট গঠনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আরও কার্যকর সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সম্মেলনে দেশের প্রথম ‘মানবাধিকার অলিম্পিয়াড–২০২৫’–এর আয়োজন ও তার বিজয়ীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অলিম্পিয়াডে বিজয়ী ১০ জন শিক্ষার্থীকে ব্যাগ, সনদ, সম্মান স্মারক ও অর্থ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সমাপনী বক্তব্যেএইচআরএসএস-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাদা আল-আমীন কবীর (সোহেল) বলেন, ‘আমরা চাই একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। মানবাধিকার আন্দোলনে সকলে অংশগ্রহণ করলেই এই পরিবর্তন সম্ভব।’

সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, শহীদ পরিবার ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের সদস্যরা অংশ নেন। মানবাধিকার সুরক্ষায় সম্মেলনটি এক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ