ভবন নির্মাণের জন্য কাটা হলো অর্ধশতাধিক গাছ, জানে না জাবি প্রশাসন
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:৪৪ PM , আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৩ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভবন নির্মাণের জন্য প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কাটার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার (৩০ জুন) সকালে এক্সকেভেটর দিয়ে এসব গাছ কাটা হয়।
পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে প্রশাসনের পূর্বানুমতি ব্যতীত কাটার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনে ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের পেছনে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ভবন নির্মাণের জন্য ছোট বড় প্রায় ৪০ টি গাছ কাটা হয়েছে।
জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের উদ্যোগে এই গাছ কাটা হয়েছে। ওই অনুষদের শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণীকক্ষের সংকটে আছে বলে জানা গেছে। শ্রেণীকক্ষের সংকট নিরসনে অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়ে আসলেও প্রতিকারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গাছ কাটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই গাছ কাটার অনুমতি দিইনি। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের না জানিয়েই কাজ শুরু করেছে।’
এদিকে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জানতাম না এতগুলো গাছ কাটা হয়েছে। আমার কোনো অনুমতি ছাড়াই এটা করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক যদি বলে থাকেন যে, তিনি জানতেন না তাহলে এটা কীভাবে হলো, আমি বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছিলাম যে, মাস্টারপ্ল্যান দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণকাজ হবে না। শিগগিরই এই ঘটনায় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক শামসুল আলমকে তদন্ত কমিটির সভাপতি করে গঠিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান ভবন ও নির্মাণাধীন থিয়েটারের মাঝামাঝি স্থানে গাছ উপরে ফেলার বিষয়টি তদন্তপূর্বক সত্যতা উদ্ঘাটন করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
গাছ কাটার ব্যাপারে ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সজিব আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া উন্নয়নকাজ না করার দাবিতে আন্দোলন করছি। অথচ প্রশাসন জানে না, কে কবে গাছ কেটে দিল। এটা কেবল গাফিলতি নয়, দায় এড়ানোর চেষ্টা।’
পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘এই এলাকায় শিয়াল, বনবিড়াল, ফিশিং ক্যাটসহ নানা বন্য প্রাণীর বসবাস ছিল। মাত্র দুই মাস আগেও এখানে শিয়াল শাবকদের নিয়ে বাস করছিল। এখন সেই আশ্রয়ও হারাল তারা।’
‘শিক্ষার্থীদের সমস্যা শুধু অবকাঠামো নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পনার অভাবজনিত সমস্যা। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম শুধু পরিবেশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কাজ শুরুর আগেই গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাস্টারপ্ল্যান সংশোধনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয়।
১৩ মে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আরেক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায়, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নতুন করে কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ৯ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২০ মে'র মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দৃশ্যমান অগ্রগতি উপস্থাপন করা হবে। তবে এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।