‘বেশি পড়া দেন, দ্রুত সিলেবাস শেষ করেন’— এটাই ভুল ঢাবি শিক্ষকের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ PM , আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ PM
‘‘শিক্ষার্থীদের অনেক বড় বড় অ্যাসাইনমেন্ট করান, পুরো সিলেবাস শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করেন এবং একসাথে অনেক পড়া দেন’’— অভিযোগগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরিতে ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ (সিআর) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ছাত্র-উপদেষ্টাদ্বয়, সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সিআরবৃন্দ। সভা থেকে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নানা দাবিদাওয়া ও অভিযোগ পেশ করেন সিআররা।
‘দাবিনামা’য় একটি অভিযোগ হল— ‘মেহেদী স্যার অনেক বড় বড় অ্যাসাইনমেন্ট করান এবং এগুলো হাতে লিখে তাদেরকে অনেক সময় স্যারের ঠিকানায় কুরিয়ারও করতে হয়েছে। এছাড়াও তিনি পুরো সিলেবাস শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করেন এবং একসাথে অনেক পড়া দেন। শিক্ষার্থীরা শিখলো কি না তা নিশ্চিত করেন না।’
এসময় সিআররা তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসগুলোতে তেমন কিছুই শেখেননি বলে জানান এবং এজন্য তারা কোর্স শিক্ষকদের দায়ী করেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে আলোচনা করেছে এবং সম্মতি দিয়েছে এই মর্মে তারা প্রথম বর্ষের কোর্স শিক্ষকদের পরিবর্তন দাবি করেন এবং সকল শিক্ষককে ক্লাসে টপিকের মধ্যে আলোচনা সীমিত রাখার অনুরোধ জানান। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের পক্ষে ভূমিকা পালনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিভাগীয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে দাবি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্সি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেহেদী হাসান স্যার শিক্ষার্থীদের নানাভাবে শেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর এটা পছন্দ নয়। তারা পড়াশোনা না করে পরীক্ষায় নম্বর পেতে চায়। একজন শিক্ষক বিভাগে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্সের সিলেবাস শেষ করবেন এটা স্বাভাবিক বিষয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসি। কিন্তু এটাকে অপরাধ হিসাবে দেখছে একদল শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অভিযোগ দিয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। ’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন,‘এই অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মেহেদী স্যার ক্লাসে দায়িত্ব সম্পন্ন আচরণই করেন। মিডের পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে উনি তাই করেন। আমাদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা কুরিয়ার করি। আর সত্যি বলতে আমাদের একদম নতুন একটা ভাষা শেখাতে উনার অবদান সবচেয়ে বেশি। ক্লাসে মেহেদী স্যার প্রতিটা শব্দ বুঝিয়ে দেন। মিড-ফাইনালের আগে প্রশ্ন প্যাটার্ন সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। উনার মধ্যে কোনো ধরণের ভায়াসনেস নেই।’
এ বিষয়ে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মেহেদী হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেশি পড়ানো এবং সময়মত কোর্স শেষ করানো যদি একজন শিক্ষকের অন্যায় হয়, তাহলে শিক্ষকের কাজটা কী? আমাদের বিভাগে বিদেশী ভাষা এবং সাহিত্য শেখানো হয়। এসএসসি ও এইচএসসিতে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়গুলো পড়েন না। কাজেই যদি চাপ বেশি না দেওয়া হয়, তাহলে তারা এ ভাষা শিখতে পারবেন না? ভাষা না জানলে সাহিত্যটা কীভাবে বুঝবে?
অ্যাসাইনমেন্ট কুরিয়ার করতে বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারীর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে হয়েছিল। তখন আমাদের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল যে, মিডটার্ম পরীক্ষা অনলাইনে না নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নেব। তখন কেউ ঢাকায় ছিল, কেউ আবার গ্রামের বাড়িতে ছিল। ওই মুহূর্তে যে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে বলা কোনো দিক দিয়েই সঠিক মনে হয়নি। সেজন্য শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কুরিয়ার করতে বলা হয়েছিল। এটি শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য করা।