ঢাবি উপাচার্য পদ
আখতারুজ্জামানের আমল শেষ, শুরু হচ্ছে মাকসুদ কামালের যুগ
- ইলিয়াস শান্ত
- প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩০ AM , আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:০২ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে টানা ৬ বছরের বেশি সময় দায়িত্বপালন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) উপাচার্য পদে শেষ কার্যদিবস ছিল তার। আলোচনায় পূর্ণ ছিল তার এ পুরো মেয়াদকাল। অর্জনও কম ছিলো না বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম এ উপাচার্যের। অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের আমল শেষে আগামী ০৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ২৯তম উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মাকসুদ কামালের যুগ।
এর আগে, গত ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে নিয়োগ পান বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। আগামীকাল ০৪ নভেম্বর থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। চারটি শর্তে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে সাময়িকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ২৮ বছর পর ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘সাময়িকভাবে’ নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাবির আগের দুই ভিসিও
সেগুলো হলো- মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন; এ পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতাদি প্রাপ্য হবেন; তিনি বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন; তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
‘পাবলিক হেলথ’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিভাগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সহকর্মীদের সঙ্গে একই ফ্রেমে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক মাকসুদ কামাল
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ‘সাময়িকভাবে’ প্রথম নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্বপালন করেন। এরপর ‘সাময়িক’ নিয়োগে তিনি দুই বছর দায়িত্বপালন করেন। পরে চার বছরের জন্য পূর্ণ নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ২৮ বছর পর ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে বিবেচনা করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ মার্চ প্রায় তিন দশক বছর পর ডাকসুর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি পদে নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর। আর জিএস পদে ছাত্রলীগ থেকে গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন।
উপাচার্য পদে শেষ কর্মদিবসে সহকর্মীদের সঙ্গে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান
আরও পড়ুন: শেষ কার্যদিবস পার করে ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন’ ঢাবি ভিসির
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, সাংবাদিককে সর্বোচ্চ সহযোগিতাসহ বেশকিছু কাজে প্রশংসিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী এ উপাচার্য।
রীতিমতো সমলোচনা ও বিতর্কও ছিলো অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে নিয়ে। বিশেষ করে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্যের দায়িত্বকালে তিনি তার ভাগনে, ভাগনি জামাই, উপাচার্যপত্নী সালমা জামানের ভাতিজি, ভাইয়ের ছেলের বউ, ভাগনি জামাই, খালাতো বোনের মেয়েসহ প্রায় ৪০ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগামীকাল শনিবার থেকে ‘সাময়িক’ নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
আরও পড়ুন: ঢাবির ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল
এছাড়া অধ্যাপক আখতরুজ্জামানের মেয়াদে একেবারে শেষ সময়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এ সমাবর্তনে স্মারক ক্রেস্ট ও কোটপিন সরবরাহে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ক্রিয়েটিভ প্লাস ও হাতবাক্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নকল ও নিম্নমানের উপাদানে এসব সামগ্রী তৈরি করা হলেও বাছবিচার ছাড়াই গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগামীকাল শনিবার (০৪ নভেম্বর) থেকে ‘সাময়িক’ নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। ২০২০ সালের জুন মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করে আসছেন এ অধ্যাপক।