ঢাবি সাংবাদিক সমিতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্পন্ন

বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান
বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ২০২৩ সালের নতুন কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও সদ্য সাবেক সভাপতি মামুন তুষারের হাত থেকে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসময় বর্ষসেরা রিপোর্টার পুরস্কার, দায়িত্ব হস্তান্তর ও 'সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের সংকট: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়৷ 

'সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের সংকট: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিখ্যাত অনুসন্ধানী রিপোর্টার জুলফিকার আলী মানিক বলেন, সাংবাদিকতা একটি বৈশ্বিক পেশা। অনেকে সাংবাদিকতা নিয়ে সমালোচনা বা প্রশংসা করেন, অনেকে বুঝে বা না বুঝেও বিভিন্ন কথা বলে থাকেন।  সাংবাদিকতা এমন এক পেশা, যেখানে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে যার ফলে সাংবাদিকরা তার বাইরে যেতে পারে না। সাংবাদিকতায় ব্রেইন খাটিয়ে কাজ করতে হয় আর ব্রেইনকে কিন্তু বন্দি করা যায় না। 

তিনি বলেন, সমাজে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট রয়েছে। আমি দল করি একটি দল আছে কিন্তু আমি সাংবাদিক, আমাকে হতে হয় নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ। আমিও ভোট দেই, কাকে দেই সেটা আমি জানি কিন্তু যখনই আমি পেশায় ফিরে আসি আমি কিন্তু নিরপেক্ষ হয়ে যাই। রাজনীতির চাইতে সাংবাদিকতা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। সাংবাদিকদের সাময়িক দমন, কাজের গতি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। আজকে আপনি সাংবাদিকদের পছন্দ করেন না, কিন্তু আপনি বিপদে পড়লে ঠিকই তাদের কাছে আসেন। সাংবাদিকতা ক্ষমতাসীনদের শত্রু এবং বিরোধী দলের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর একমাত্র পেশা যার মূল লক্ষ্য 'সত্য বলে দেওয়া'। মানুষ খারাপ কাজগুলোকেই লুকায় আর ভালো কাজকে প্রকাশ করে। আর এই লুকানো খারাপ কাজগুলোকে প্রকাশ করলেই মানুষ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যায়।

আরও পড়ুন: মেডিকেলে ভর্তির শেষ অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ, সুযোগ পেলেন ৯৯ জন

সাংবাদিকদের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার মূল কাজ হলো সমাজের অসংগতি তুলে ধরা। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা করে তারা সাংবাদিকতাকে পছন্দ করে না। যখন সাংবাদিকতা রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে চলে যায় তখন সে-ও কিন্তু সাংবাদিকতাকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লাগে। অনেকে নেতিবাচক সাংবাদিকতা করেন, কিন্তু সেটাও কিন্তু মানুষ বা সমাজের নেতিবাচক কাজের জন্যই করা হয়। ধরেন কেউ সংকটে রয়েছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আমি যদি লেখি এ বিষয়ে তাহলে তারা ন্যায়বিচার বা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে কিন্তু আমি না লিখলে সে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আমি নেতিবাচক কথা না লিখলে অপরাধী বেঁচে যাবে। সাংবাদিকতায় একদিন আপনার পক্ষে যাবে একবার আপনার বিপক্ষে। সুতরাং সাংবাদিকতায় নেতিবাচক বা ইতিবাচক বলতে কোন কথা নেই।
  
তিনি আরও বলেন, ছোট বেলায় শুনতাম 'চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী', এখন শুনি 'চোরেই শোনায় ধর্মের কাহিনী'; চোরের মায়ের বড় গলা' কিন্তু এখন শুনি চোরের নিজেরই বড় গলা'। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানেও অনেক পেশাদারিত্বের সংকট রয়েছে। ভালো রেজাল্ট পেতে হলে যেমন ভালো ছাত্র হতে হয় তেমনই ভালো সমাজ পেতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ না হলে সুন্দর দেশ গঠন করা সম্ভব। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। অন্যদিকে ভালো মানুষ তৈরির কারখানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখান থেকে বের হয়েই তারা দুর্নীতি করে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষায় ত্রুটি রয়েছে। আমাদের এটা পরিবর্তন করতে হবে। সাংবাদিকতায় সততা অপরিহার্য। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সাহসী ও সত্যবাদী হতে এবং সাংবাদিকদের প্রতি অন্য সবাইকে সহানুভূতিশীল হবার আহবান ব্যক্ত করেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা সাবেক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে গত একটি বছর সমিতিকে পরিচালনা করেছেন। সাংবাদিক সমিতি একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যারা মূল্যবোধ রক্ষায় কাজ করেছে। ক্যাম্পাসে যখন রাজনৈতিক টানাপোড়ন চলে যখন সকল রাজনৈতিক দলকে এক ছাদের নিচে উপস্থিত করিয়ে ভাব বিনিময় করিয়ে থাকে এই সাংবাদিক সমিতি। 

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেন তখন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি। সাংবাদিকদের সবসময় 'ওয়াচডগে'র ভূমিকা রাখতে হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সবাই 'ওয়াচডগে'র ভূমিকা পালন করে আসছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে  বিবেক ও জ্ঞানকে দিয়ে পরিচালিত হওয়া, নীতিবোধ, মূল্যবোধ দ্বারা 'সেল্ফ সেন্সরশিপ' গঠন করা এবং পেশাদারিত্বের জায়গায় মূল্যবোধ বজায় রেখে কাজ করার আহবান ব্যক্ত করেন। 

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে আমাদের সাংবাদিক সমিতি গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সমিতির সদস্যরা নিজেদের ইচ্ছাকৃত কাজ করে না বরং আপনারা যা কাজ করেন সেটাই শুধু মানুষের সামনে তুলে ধরে। আপনারা যদি ইতিবাচক কাজ করেন তাহলে ডুজার সদস্যরা ইতিবাচক বা আপনারা নেতিবাচক কাজ করলে ডুজার সদস্যরা নেতিবাচক নিউজ করে থাকে। সুতরাং সমিতির সদস্যদের যদি ইতিবাচক হতে বলেন তাহলে প্রথম আপনাদের ইতিবাচক কাজ করতে করতে হবে। এসময় তিনি সমিতির সদস্যদের  মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার আহবান ব্যক্ত করেন।  

ডুজার সভাপতি আল সাদী ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, অনুসন্ধানী রিপোর্টার জুলফিকার আলী মানিক, ডুজার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বোরহানুল হক সম্রাট, ডুজার সদ্য সাবেক সভাপতি মামুন তুষার, সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম রুবেল বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence