দেশ-জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন পহেলা বৈশাখ: রাবি উপাচার্য

রাবিতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার
রাবিতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার  © টিডিসি ফটো

জীর্ণ, অশুভ, অসুন্দর সব কিছু পিছনে ফেলে নতুনের কেতন উড়িয়ে বাংলা ১৪৩০-কে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। দিনটিকে ঘিরে চারুকলা অনুষদ সজাগ থাকলেও তবে ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ায় সাদামাটাভাবেই পালিত হয়েছে দিবসটি। কেননা প্রতিবছর ক্যাম্পাস ঘিরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর উৎসুক জনতার ভিড় থাকলেও এবছর তা লক্ষ করা যায়নি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। ঢাক-ঢোল আর গানের তালে মুখরিত ছিল চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তবে অন্যান্য বারের মতো এবার এতো লোক সমাগম ছিল না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র দাবদাহ ও ক্যাম্পাস ছুটির কারণে লোকজনের উপস্থিতি কম। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে শুষ্ক বৃক্ষের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হওয়ার একটা প্রবণতা ফুটে উঠেছে। আধুনিক বাংলাদেশ ও লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে পালিত হয়েছে এবারের শোভাযাত্রা।

এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ছিল পঙ্খিরাজ ঘোড়া। পাশাপাশি শুভকামনার প্রতীক হিসেবে ছিল কচ্ছপ, ছোট-বড় টেপা পুতুল, নারী-পুরুষের মুখোশ ও গাছের গুড়ি। শোভাযাত্রায় হাতপাখাকে বৈশ্বিক জ্বালানির সংকট নিরসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পঙ্খিরাজ ঘোড়াকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। 

শুক্রবার সকাল ১০টায় চারুকলা চত্বরে জাতীয় সঙ্গীত এবং ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

বৈশাখী উৎসব উদ্বোধন করে উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। পহেলা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ; বৈশাখ বাঙালির জীবনে কী গ্রামে, কী শহরে নিয়ে আসে নতুনের সমারোহ। স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়ও থাকে এক নতুনের আগমন ধ্বনি ও প্রাণচাঞ্চল্য। বাঙালি সংস্কৃতিতে নানা সময়ে নানাভাবে অন্য সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে। কিন্তু নব বঙ্গাব্দ একান্তভাবে বাঙালির নববর্ষ। বাঙালি সংস্কৃতির সাথে এই নববর্ষের সম্পর্ক চির অবিচ্ছেদ্য। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সমৃদ্ধ আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার শপথের দিনও পহেলা বৈশাখ। দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার দিনও এই পহেলা বৈশাখ। সেই প্রত্যয়ে সকলকে একতাবদ্ধ হতে তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা নব বৈশাখের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল ঘৃণা-বিদ্বেষ, কুসংস্কার ভুলে বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই এবং দেশ গড়ার কাজে সবাই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করি, নববর্ষে এই হোক আমাদের প্রত্যয়।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সবাইকে এই বৈশাখে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।


সর্বশেষ সংবাদ