নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস শুরু আজ

রাবি শিক্ষার্থীদের বাইরে যেতে বারণ মেস মালিক সমিতির

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষের জেরে দু’দিন বন্ধ থাকার পর কাল থেকে আবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যথারীতি শুরু হচ্ছে ক্লাস ও চলমান পরীক্ষা। ঘটনার পর এখনো গুমোট ভাব বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। নিরাপত্তার স্বার্থে রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসতে নিষেধ করে মাইকিং করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জানিয়েছেন, কাল থেকে যথারীতি ক্লাস পরীক্ষা চলমান থাকবে। তবে, সবমিলিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাল থেকে শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও চলমান পরীক্ষা।

অন্যদিকে, সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে-পাশে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের মেসের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতি। সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এ.এস.এম ওমর শরিফ (রাজিব) ও যুগ্ম সম্পাদক কায়সান আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

মেস মালিক সমিতি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিনোদপুর স্থানীয়দের সাথে যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে তা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। এতে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা নানাভাবে জখম হয়েছে। আবার স্থানীয় দরিদ্র মানুষের একমাত্র উপার্জনের ছোট দোকানটিও পুড়ে গেছে। এ সংঘর্ষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা শিক্ষিত মানুষ, হিংস্রতা পরিহার করি। এই সুযোগে কেউ যেন ফায়দা লুটে নিতে না পারে। ঘোলা পানিতে যাদের মাছ শিকার করা অভ্যাস তাদের সুযোগ না দেওয়াই ভালো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা বিভিন্নভাবে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা সম্মিলিতভাবে সবার পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। যে পক্ষ বেশি বাড়াবাড়ি বা অন্যায় করবে, তা অবশ্যই প্রমাণের সাপেক্ষে আইনের মুখোমুখি করতে হবে। আর যেন কারও এক ফোঁটা রক্ত না ঝরে। যে সব শিক্ষার্থীরা মেসে অবস্থান করছে তারা যেন বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকে। দলবদ্ধভাবে বা কয়েকজন একসাথে ঘোরাঘুরি করো না। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটে গেলে তোমরা বিপদে পড়বে। সেই দায় মেস মালিক সমিতি নিবে না। 

আর রাবি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের অকারণে প্রবেশ ও যত্রতত্র ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করতে মাইকিং করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার সন্ধ্যায় থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সড়ক, হল, চারুকলা এলাকা, মেইনগেট, বিনোদপুর গেট, কাজলা গেটে মাইকিং করতে দেখা গেছে।

এতে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে সঙ্গত কারণে কারো ক্যাম্পাসে আসার প্রয়োজন হলে প্রবেশ গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের কাছে পরিচয় যাচাই ও ক্যাম্পাসে প্রবেশের কারণ নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিচয়পত্র সাথে রাখার আহ্বান করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে ক্লাস পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুইদিন ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিলাম। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসে সকল বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ড সাথে নিয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগতদের বেশি দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত গেইট থাকার এমন সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা গেইটের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।

সোমবার দুপুরে  সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে  সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার

উপাচার্য বলেন, স্থানীয়দের সাথে আমার ছাত্রদের যে সংঘর্ষ হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। বাস কন্ডাক্টারের সাথে শিক্ষার্থীদের যে ঝামেলা বেঁধেছিল তাতে স্থানীয়রা না জড়ালে এমন সংঘর্ষ সংগঠিত হতো না। কিন্তু কতিপয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে জড়িয়ে পড়ায় এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। এ ঘটনায় আমার দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারও উন্নত চিকিৎসা লাগলে আমরা তার ব্যবস্থা করবো। তাদের সকল চিকিৎসা ভার আমরা বহন করছি। 

আন্দোলন-কালে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গতকাল শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে যে আন্দোলন হয়, প্রথম দিকে আমাদের শিক্ষার্থীরাই ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও কার্যক্রমে বহিরাগতরা যুক্ত ছিল বলে আমার মনে হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তাই রেললাইনসহ ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন বন্ধ রেখেছে এসব বহিরাগতরা। কাল পরশু আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে বসবো। তখন তাদের দাবিগুলো আমরা পূরণ করার চেষ্টা করবো।

অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামীকাল মেস মালিক সমিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা বসবো। শিক্ষার্থীদের জন্যই তো মেস মালিকরা চলে। তাই তাদের প্রতি যেন স্থানীয়রা কোনো ধরনের অন্যায় না করে সে বিষয়ে দেখভাল করা উচিত।  আমরা চাই মেস মালিকদের সাথে আমাদের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের একটি সখ্যতা গড়ে উঠুক। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। এটি যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা চাই সকলের সাথে আমাদের একটি মেলবন্ধন থাকুক।

অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় চোখে গুরুতর আঘাত পাওয়া তিন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং তাদের অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠায় সোমবার হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের ভেতর এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। বাস থেকে পেটাতে পেটাতে চালককে নামিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ লেগে যায়। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারের দোকানপাটে আগুন দিলে কয়েকজন ব্যবসায়ীও আহত হন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

এ ঘটনায় রবিবার (১২ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিনোদপুর এলাকার ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় মো. তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নগরের খোঁজাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি বাসের কাউন্টারের চেইন-মাস্টার; গ্রেপ্তার তসলিম প্রথমে শিক্ষার্থীদের আঘাত করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence