অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে আসক্তি? জেনে নিন মুক্তির উপায়

স্মার্টফোনে আসক্তি বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা
স্মার্টফোনে আসক্তি বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা  © সংগৃহীত

স্মার্টফোনে আসক্তি বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। পরিবার ও সামাজিক পরিসর, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনে আসক্তি মাসসিক অসুস্থতার একটি বিশেষ রুপ হিসেবে ধারণ করা হচ্ছে। আড্ডা তো বটেই, কাজের আলাপের সময়ও কারও কারও চোখ পড়ে থাকে স্মার্টফোনে! চারপাশে কী হচ্ছে, সেসবে যেন খেয়াল করেন না তাঁরা। এর ফলে কোনো নোটিফিকেশন বা অ্যালার্ট ছাড়াই কিছু মানুষ অন্তত ১৫ মিনিটে একবার করে তাদের ফোন চেক করেন। 

মোবাইল এবং ইন্টারনেট সংযোগ আমাদের জীবনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যেখানে অবসর সময়ও আমরা মোবাইল ফোনে নানা ধরণের ভিডিও দেখে কাটাই। বর্তমানে প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এত বেশি সম্পর্কিত যে, কিছুক্ষণ এ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই; এই বুঝি কত কিছু মিস করে গেলাম। মোবাইল ফোনে অধিক সময় ব্যয় করা কেবল সময়ের অপচয় নয়, মানসিকভাবে ক্লান্তিকরও বটে। 

মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রায়ই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। তাই স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি কমানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী কমিয়ে ফেলা অবশ্যই একটি ভালো সিদ্ধান্ত। প্রাত্যহিক কিছু চর্চার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এই স্মার্টফোনে আসক্তি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে সিএনএন অবলম্বনে এক চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

মোবাইল আসক্তি ডেকে আনছে বিপদ!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনের এই আসক্তি অনেকটাই সংক্রামক। কোনো ঘরে বা কোনো আড্ডায় কেউ একজন হাতে স্মার্টফোন তুলে নিলে দ্রুতই অন্যরাও একে একে হাতে নিয়ে তাতে নজর বুলাতে শুরু করেন। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ক্যাথেরিন স্টাইনার-অ্যাডায়ার সিএনএনকে বলেন, অনেক মানুষেরই কিছুক্ষণ পরপর স্মার্টফোন চেক করার বাতিক আছে। প্রতিটি নোটিফিকেশন, লাইক, কমেন্ট এসব যেন তাঁদের মস্তিষ্কে একটা আনন্দ সংবাদের মতো প্রতিক্রিয়া করে এবং তাঁরা উদগ্রীব হয়ে ফোন দেখতে শুরু করেন।

স্মার্টফোনে আসক্তি কমানোর জন্য নিয়মিত কিছু চর্চার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
১. প্রয়োজনীয় কথাবার্তার বাইরে স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নেওয়া। ধরা যাক, রাতের খাবারের পর ১৫ মিনিট।
২. বাড়িতে কিছু ‘স্ক্রিন-মুক্ত এলাকা’ তৈরি করা, যেখানে কেউই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে মেতে থাকতে পারবেন না।
৩. স্মার্টফোনে ব্যয় করার সময়টুকু শিশুদের সঙ্গে কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া, শিশুদের সময় দেওয়া।
৪. যেসব কাজ শিগগিরই শেষ করতে হবে, তার একটা তালিকা কাগজে লিখে রাখুন। কাগজটি স্মার্টফোনের সঙ্গে রেখে দিন, যাতে ফোন তুলতে গেলেই ওই কাজের তালিকায় চোখ যায়।
৫. অনলাইনে শেয়ার করতে হবে এমন লেখালেখিগুলো অফলাইন থাকা অবস্থাতেই শেষ করে নিন।
৬. অপ্রয়োজনীয় সব নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন, বিশেষ প্রয়োজন থাকলে ব্যতিক্রমের তালিকা আপডেট করে কেবল তাঁদের নোটিফিকেশনই চালু রাখুন।
৭. নির্দিষ্ট কাজের সময়গুলোর জন্য টাইমার সেট করে রেখে বিরক্তিকর অ্যাপসগুলোর অ্যাকসেস ও নোটিফিকেশন অফ করে রাখুন।
৮. ‘মোমেন্ট’-এর মতো কোনো একটা অ্যাপস ডাউনলোড করে নিন, যা আপনাকে দিনে কতবার ফোন তুলে নিচ্ছেন তা মনে করিয়ে দেবে এবং আপনাকে এই কাজে নিরুৎসাহিত করবে।
৯. আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনাকে ‘একঘেয়ে লাগা’ ও ‘ভালো না লাগা’র মতো অনুভূতিগুলোর সঙ্গেও কিছুটা সময় মানিয়ে চলতে শিখতে হবে, এসবে অভ্যস্ত হতে হবে।

এ ছাড়া ফোন আসক্তি কমাতে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে পারেন, সেগুলো হলো-  

নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন
আপনার ফোনে যখন একের পর এক নোটিফিকেশন আসার শব্দ বন্ধ হবে, তখন ফোনের আসক্তি উপেক্ষা করা কিছুটা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমাইজ সেটিংস অপশনে গিয়ে অফিসের বা খুব বেশি প্রয়োজনীয় মানুষের ছাড়া বাকিদের নোটিফিকেশন অফ করে রাখা যেতে পারে। এতে আপনার ফোনের প্রতি আসক্তি কিছুটা কমতে পারে। 

ফোনে রাখুন একটি রাবার ব্যান্ড
অবচেতন মনে ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে ফোনের চারপাশে একটি রাবার ব্যান্ড জড়িয়ে নিতে পারেন। এতে ফোন ব্যবহারের সময় সেটিতে হাত পড়লে ব্যবহার কমানোর কথা মনে পড়তে পারে। এ ছাড়া রাখতে পারেন কোনো স্ক্রিনসেভার। এটি করলে উদ্দেশ্যহীনভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সময় বাঁচবে।

অ্যালার্ম ঘড়ির ব্যবহার
মোবাইল ফোনটি অ্যালার্মের কাজে ব্যবহার করলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এলার্ম বন্ধ করে প্রথমে অপ্রয়োজনে মেসেঞ্জার বা মেইল বক্স চেক করার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করলে ফোন ব্যবহার ছাড়াই অতিরিক্ত কিছু সময় বাঁচানো যায়। এ ছাড়া ভিন্ন একটি রুমে ফোন চার্জে দেওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে ফোন চেক করা যেতে পারে।

বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। বই ধরলেও তা হাত থেকে পড়ে যায়। একটি বাক্যও এগোতে পারেন না। সবচেয়ে বড় কথা, যেটুকু পড়তে পারলেন, তা পরের দিন পর্যন্ত মনেও রাখতে পারেন না অনেকে। তাই আবার প্রথম থেকে পড়তে শুরু করতে হয়। হয়তো এই ধরনের সমস্যা থেকেই বই পড়ার উৎসাহ হারিয়ে যেতে বসে। তবে বই পড়া তো এক ধরনের অভ্যাস। তাই এক দিনেই তা রপ্ত করে ফেলা যায় না। তবে সামান্য কিছু বিষয়ে নজর দিলেই আবার সেই অভ্যাস ফিরে পাওয়া যায়।

মোবাইল ফোন থেকে বই পড়ায় ৫ উপায়ে মনোযোগ দিতে পারেন:

১) পড়ার পরিবেশ
টেবিল চেয়ারে বসে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করলেও গল্পের বই সেখানে বসে পড়তে ইচ্ছে করে না। তাই পড়ার জন্য এমন একটি নিরিবিলি জায়গা বেছে নিন, যেখানে বসলে পড়তে ইচ্ছে করবে।

বই পড়া কি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে? - BBC News বাংলা

২) লক্ষ্য স্থির রাখা
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা সময় বাঁচিয়ে রাখুন বই পড়ার জন্য। নির্দিষ্ট ওই সময়টুকু আর অন্য কিছুতেই ব্যয় করবেন না। প্রতি দিন একটি পাতা করে পড়তে হবে এমন লক্ষ্য স্থির করেই বই পড়তে শুরু করুন।

৩) পছন্দের উপর গুরুত্ব দিন
আগে থেকে বই পড়ার অভ্যাস যদি না থাকে, যে কোনও বই পড়তে ভাল লাগবে না। সে ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের উপর গুরুত্ব দিন। যে বিষয়গুলি পড়তে ভাল লাগে, তেমন কোনও একটি দিয়ে পড়তে শুরু করুন।

৪) নিয়মিত পড়ার অভ্যাস
যত কাজই থাকুক না কেন খাওয়া, শোয়ার মতো বই পড়াতেও অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কোথাও যাতায়াতের সময়ে সঙ্গে যে কোনও একটি বই রাখা যেতে পারে। সময়-সুযোগ বুঝে পড়ার অভ্যাস জারি রাখতে পারেন।

৫) স্ক্রিনটাইম কম
ফোন, ল্যাপটপ ছাড়া এখন কাজ করা অসম্ভব। তাই চাইলেও সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে কতটা সময় সেই খাতে ব্যয় করবেন, তা নির্দিষ্ট করে নেওয়াই যায়।


সর্বশেষ সংবাদ