অল্প তেলে রান্না করুন গরুর গোশত, সঙ্গে দিতে পারেন সবজি

কোরবানির ঈদ মানেই মাংস খাওয়ার বিশেষ আয়োজন
কোরবানির ঈদ মানেই মাংস খাওয়ার বিশেষ আয়োজন  © সংগৃহীত

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আসছে কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদ মানেই মাংস খাওয়ার বিশেষ আয়োজন। মুসলিম ধর্মীলম্বীরা স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে গরু, খাসি, উট কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানির পর শুরু হয় বিলানোর কাজ। এরপর নিজেদের মাঝেও এ মাংস খাওয়ার এক মহা উৎসব শুরু হয়। মানুষের প্রতিদিন নিয়মিত কাজের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়; পশুর মাংস এ শক্তি আহরের দারুণ উপাদান হতে পারে। খাদ্যবিজ্ঞানে এই শক্তিকে ক্যালোরি বা কিলোক্যালরি বলা হয়। তবে এসব খাবারগুলো খেতে হবে নিয়ম মেনে।

গরু, খাসি, উট এ ধরনের প্রাণীর মাংসগুলোকে রেড মিট বলে। রেড মিটে জমাট বাঁধা অবস্থায় অনেক চর্বি থাকে। স্বাস্থ্যের জন্য এই চর্বির ভালো দিক যেমন আছে তেমনি রয়েছে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি। সবার প্রতিদিন একই পরিমাণ ক্যালরী বা শক্তি দরকার হয় না। আমাদের প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরী বা শক্তি খাবার থেকে প্রয়োজন তা নির্ভর করে বয়স, উচ্চতা, পেশা, নারী-পুরুষ-শিশু, শারীরিক অবস্থা এবং লাইফস্টাইলের উপর।

মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি অনেক উপকারও করে থাকে। মাংস হচ্ছে প্রাণীজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে ২৬ গ্রাম প্রোটিন। এই প্রোটিন শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি সাধন ও দেহ গঠন করে। নতুন কোষ গঠন করে ক্ষয়পূরণ করতে ও কোনো ক্ষতস্থান সারাতে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। যখন দেহে চর্বি ও শর্করার অভাব দেখা যায়, তখন প্রোটিন শক্তি উৎপাদনের কাজ করে। 

ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মতে, কারোরই প্রতিদিন ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত নয়। তাই একজন মানুষ দৈনিক ৫০-৭০ গ্রাম বা সপ্তাহে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম মাংস খেতে পারবেন। কিন্তু স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় অতি ভোজনে বিপদ হতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে ২.৫ গ্রাম। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র অনুযায়ী, দৈনিক ২০০০ ক্যালরি চাহিদাসম্পন্ন একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১৩ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করতে পারবেন।

কেবল গরুর মাংসেই যে এই ফ্যাট রয়েছে তা কিন্তু নয়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অন্যান্য উৎসেও এর উপস্থিতি রয়েছে। এর প্রভাবে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের ঝুঁকি। তাই যাদের ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডেমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের পূর্ব ইতিহাস বা পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা পালন করতে হবে।

কোরবানির মাংস বাড়িতে আসার সাথে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে অথবা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে সঠিকভাবে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে এবং ছয় ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে। গোশত সংরক্ষণ ও রান্নাবান্নার কিছু টিপস জেনে আসা যাক—

* মাংসগুলো থেকে চর্বি আলাদা করে নিন। মাংসগুলোকে ছোট ছোট টুকরা করে কাটুন। যত ছোট টুকরা করবেন, ততই তেলজাতীয় পদার্থ ঝরে যাবে। রাতে রেড মিট এড়িয়ে চলাই ভাল।

* অল্প তেলে রান্না করুন। অনেকে মনে করেন, তেল বেশি দিলেই বুঝি রান্না ভালো হয়। একদম ভুল কথা। কারণ, গরুর মাংসের নিজস্ব যে তেল আছে, তাতেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। সয়াবিনের বদলে ব্যবহার করতে পারেন শর্ষের তেল। তবে অলিভ অয়েল হলে সবচেয়ে ভাল।

আরও পড়ুন: শরীরের মেদ কমাতে ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ডিটক্স ওয়াটার

* গরুর মাংস রান্না করতে পারেন সবজির সঙ্গে। তাতে প্রোটিন, তেল বা ক্যালরি সবটার পরিমাণই কমে আসবে। আলু, পেঁপে, পটল, ফুলকপি বা মেটে আলু দিয়ে রান্না করতে পারেন গরুর মাংস। অনেকে আবার গরুর মাংস রান্নায় চুইঝাল আর আস্ত রসুন পছন্দ করেন। সেটিও আপনার গরুর মাংসে যোগ করবে আলাদা মাত্রা।

* মাংস উচ্চতাপে ভালভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভাল আগুনে ঝলসে খেতে পারলে।এতে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেনা। আধা সেদ্ধ মাংস বা স্টেক পরিহার করাই ভাল। গরুর মাংসের মগজ, কলিজা সেইসঙ্গে ঝোল বা স্টকে সবচেয়ে বেশি চর্বি থাকে, তাই খাওয়ার সময় সেগুলো পরিমিত খাওয়াই ভাল।

* কোল্ড ড্রিংকস, ডেজার্টের পরিবর্তে মাঠা, জিরা পানি বা টকদই রাখুন। উৎসব-আনন্দে নিয়মিত ওষুধ সেবন যেন বাদ না পড়ে। নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা বাদ দেবেন না। কিডনি জটিলতা ও ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস খাবেন। কিছুটা নিয়ম মেনে তাই পরিমিত মাত্রায় মাংস খেলে ঝুঁকির পরিমাণটা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে। পরিমিত, পুষ্টিসমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে ঈদকে করে তুলুন আনন্দময়।

* রেড মিট রান্না কয়েক পদের না করে মাংসের পাশাপাশি প্রতি বেলায় যথেষ্ট সবজি অথবা সালাদ রাখুন। কেননা সবজিতে থাকা ফাইবার মাংসের চর্বি হজমে সাহায্য করে।তাছাড়া সবজি থাকার কারণে মাংস খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমানো যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence