এলাচের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা

এলাচ সুগন্ধিযুক্ত একটি মসলা
এলাচ সুগন্ধিযুক্ত একটি মসলা  © প্রতীকী ছবি

প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরা এক সুগন্ধি উপকরণ এলাচি। চা থেকে শুরু করে পায়েস ও সেমাইসহ বিভিন্ন খাবার সুস্বাদু করতে এলাচ হরহামেশাই ব্যবহার হয়ে থাকে। এমনকি মাড়ির সমস্যা কিংবা মুখের দুর্গন্ধ রোধে এলাচ কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক ভেষজ। স্বাদ ও সুগন্ধ ভরপুর এই মসলা স্বাস্থ্য গুণাগুণ রয়েছে অনেক। তাই প্রাচীনকাল থেকেই এ মসলার ব্যবহার লক্ষণীয়।

এলাচ একটি ছোট বীজের শুঁটি। যার বাইরের দিকে কাগজের মতো ছোট কালো বীজ রয়েছে। সাদা ও কালো এ দু’ধরণের এলাচ দেখা যায়। সমৃদ্ধ সুগন্ধযুক্ত এই উপকরণ সমৃদ্ধ রন্ধনসম্পর্কীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। পানীয়, খাবার এবং মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারে স্বাদের উপাদান হিসেবে এলাচ ব্যবহৃত হয়।

এলাচের পুষ্টি উপাদান
এলাচ প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এটি উপকরণ। যাতে আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, জিঙ্ক, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এছাড়া পাইনিন, সাবিনিন, ফেলল্যান্ড্রেন, টেরপিনিন, লিনালুল, মাইরসিন ইত্যাদি তেল জাতীয় উপাদান তৈরি করে এলাচ।

গবেষণা বলছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে ভরা এই তেলগুলো শরীরে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করার পাশাপাশি বিপাককে উদ্দীপিত করে এবং টিউমার বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। তাই নিয়মিত এলাচ সেবন দেহকে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ্য থাকতে সহায়তা করে।

এলাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে এলাচ খুবই উপকারী একটি ভেষজ উপকরণ। সহজেই প্রাপ্ত এ ভেষজ স্থানীয় হাট-বাজারে পাওয়া যায়, ফলে প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এলাচের ব্যবহার করে আসছে। এ পর্যায়ে এলাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যায় এলাচ
পেটে খিঁচুনি ও অম্লতা বৃদ্ধিজনিত ব্যথা প্রশমনে এলাচ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এলাচের লালা উৎপাদন পাকস্থলীকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। যা অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ সহায়তা। তাই পেটের সমস্যায় চা-এ এলাচ মিশিয়ে কিংবা এলাচ তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও চাইনিজ বিভিন্ন ঔষধে এলাচ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ফুসফুসের সুস্থতায় এলাচ
এলাচ ফুসফুসে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। এমনকি ফুসফুসের ক্ষতিকর উপসর্গগুলি উপশম করার পাশাপাশি ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানি নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা রাখায় সাধারণত অ্যারোমাথেরাপিতে এলাচ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এলাচ শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে মানবদেহকে মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দেয়।

প্রস্রাবের সমস্যায় এলাচ
প্রস্রাবের বিভিন্ন জটিলতায় এলাচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গনোরিয়া, সিস্টাইটিস, নেফ্রাইটিস ইত্যাদি মূত্রনালী জনিত সমস্যার চিকিৎসা চলা অবস্থা খাদ্যে এলাচ ব্যবহার করে নিরাময় করা হয়। কেননা এলাচে থাকা অনন্য অপরিহার্য তেলের সংমিশ্রণ দেহে স্বাস্থ্যকর রক্ত ​​​​প্রবাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি উন্নত বডি ডিটক্স প্রদানে সাহায্য করে। ফলে এলাচ প্রস্রাবের বিভিন্ন জটিলতা প্রশমনে দেহকে সক্ষম করে তোলে।

ওজন কমাতে এলাচ
এলাচ দেহের রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করে অপ্রয়োজনীয় টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে দেহে একটি স্বাস্থ্যকর চর্বি পোড়ানোর হার বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ওজন হ্রাস পায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবুজ বা কালো এলাচের গুঁড়া, চা, পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘুমের সমস্যায় এলাচ
এলাচের স্বতন্ত্র সুগন্ধ নিঃশ্বাসে নিলে বা নাকের চারপাশে অল্প পরিমাণ এলাচের তেল লাগালে তা ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে এবং রাতের বেলায় ঘুম কম বা না হওয়া এবং অস্থিরতা হওয়ার সমস্যা কমায়। অনিদ্রা ও উদ্বেগের অবস্থার চিকিৎসায় এলাচ অত্যন্ত কার্যকরী।

জয়েন্টের ব্যথা দূর করে
দেহের বিভিন্ন জয়েন্ট ব্যথায় এলাচ উপকারী। কারণ বিভিন্ন প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে, এলাচ পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে অত্যন্ত কার্যকর।

গবেষণায় প্রমাণিত যে, পেশীর সংকোচন এবং শিথিলতা দূর করতে এলাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এলাচের অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যগুলি পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। তাই বয়স্ক মানুষসহ সকলে জয়েন্ট ব্যথায় এলাচ ব্যবহার করতে পারেন।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিকে এলাচ
এলাচের অ্যাফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্যের কারণে পুরুষের অকাল বীর্যপাত এবং পুরুষত্বহীনতার মতো সমস্যা দূর করে। এছাড়া পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এলাচের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

মুখ ও গলার সমস্যায় এলাচ
এলাচ প্রাচীনকাল থেকেই মুখের সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, মাড়ি সমস্যা, দাঁতের গহ্বর বা জীবাণু সংক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যায় এলাচ একটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এছাড়া গলা ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং গলায় জ্বালা নিরাময়ের এলাচ ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

জটিল রোগমুক্তিতে এলাচ
সারাদিন ধরে চলা বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপের ফলে শরীর যে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে, তা শরীর থেকে বের করে দেয়া প্রয়োজন। এই টক্সিনগুলি যদি যথেষ্ট পরিমাণে শরীরে থাকে, তবে দেহে ইউরিক অ্যাসিড জমা হওয়া, অকাল বার্ধক্য, কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার ইত্যাদি সমস্যার জন্ম দেয়। এলাচ ডিটক্স ওয়াটার বা চা ডিটক্সিফাইং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। ফলে দেহের এসব ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। কারণ এলাচ দেহে ক্যানসারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।

এলাচের ব্যবহার
এলাচ একটি সুগন্ধযুক্ত সুস্বাদু ভেষজ উপকরণ। তাই এলাচ বিভিন্ন রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এমনকি এলাচ চুষে কিংবা পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। গলার বিভিন্ন সংক্রমণ ও ব্যথা উপশমের জন্য এলাচ পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে উপকার হয়। এমনকি গরম জলে চা পাতা, এলাচ গুঁড়া ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথা করলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। ব্যথা নিমেষেই দূর হবে। এ ছাড়া এলাচ মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। তাই প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়মিত ২/১ টি এলাচ চুষে কিংবা পানতিতে ভিজিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা
গর্ভবতী মহিলা, স্তনদানকারী মা কিংবা পিত্তথলির জটিলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের এলাচ সেবনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এলাচ কাচা সেবনের চেয়ে যেকোনো রান্নায় গ্রাইন্ড মশলা আকারে খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence