অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত: উত্তাল রাজশাহী পলিটেকনিক

রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। রবিবার সকালে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।

বিক্ষোভে ‘ছাত্রলীগের কালো হাত ভেঙ্গে দাও, ভেঙ্গে দাও, ঠাই নাই ঠাই নাই, ছাত্রলীগের ঠাই নাই, প্রিন্সিপালের অপমান, মানি না মানব না, এধরনের বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর অনুযায়ী বিক্ষোভ অব্যহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিজ কার্যালয়ে আসছিলেন অধ্যক্ষ। এসময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাকে ধরে নিয়ে জোর করে পুকুরে ফেলে দেয়। সাঁতার জানার কারণে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। 

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা অন্যায় দাবি নিয়ে আসতো আমার কাছে। সে সব দাবি না মানায় তারা আমার উপর ক্ষুদ্ধ ছিল। তাদের দাবিগুলো মানার মত থাকে না। অনরূপভাবে সম্প্রতি ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় দুইজন ছাত্রের ফরম পুরণ হয়নি। ওই দুই ছাত্রের ফরম পুরণ করানোর জন্য সকালে কয়েকজন আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু আমি বিভাগীয় প্রধানের কাছে যেতে বলি।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, এ সময় তারা আমাকে নিয়ে আমার সামনে অশালীন মন্তব্য করে। এতে আমি তাদের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে কয়েকটি কথা বলি। এর পর তারা আমার উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে বের হয়ে যায়। পরে দুপুরে নামাজ পড়ে অফিসে যাওয়ার সময় কামাল হোসেন সৌরব আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে স্যার কথা আছে। একটু পুকুরের ধারের দিকে আসেন। আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে দুই জনের মুখ বাধা ছিল।’

অধ্যক্ষ বলেন, যেখানে আমাকে ফেলে দিয়েছে সখানকার পানির গভীরতা ছিল ১২ থেকে ১৫ ফুট। আমি সাঁতার জানতাম বলে বেঁচে গেছি। সাঁতার কেটে পাড়ে চলে এসেছি। সাঁতার না জানলে হয়তো আজই শেষ হয়ে যেতাম।

এঘটনায় শনিবার রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেন অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ। মামলায় ৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে রাতভর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের ২৮ নেতা কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্ররা জানান, ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে তারা। নানান অপকর্মে জড়িয়েও পড়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তাফা বলেন, ক্যাম্পাস থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ২৮ জনকে আটক করা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সকালে একটি মানববন্ধন হয়েছে। বর্তমানে পলিটেকনিকের অবস্থা শান্ত রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ