ফিরলেন মাধ্যমিক শিক্ষকরা, প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে অনিশ্চয়তায় কোমলমতিরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ AM , আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ AM
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশ পদ সহকারী শিক্ষক পদটি বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করাসহ চার দফা দাবিতে গত দুইদিন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে অবশেষে তা স্থগিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
এদিকে, বেতন বৃদ্ধি ও গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালনের মাঝেই শিক্ষকদের আরেকাংশ একই দাবিতে স্কুলে ‘তালা ঝোলানোর’ কর্মসূচি দিয়েছেন। ফলে, গত সোমবার শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা রাতজাগা পরিশ্রম করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। পরীক্ষার পর দাদা বাড়ি–নানা বাড়ি কিংবা বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। অনেক অভিভাবক আগেই বাস–ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছেন। পরীক্ষা না হওয়ায় সেই অর্থও নষ্ট হবে বলে তারা জানান।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষকরা আন্দোলন করতে পারেন, কিন্তু পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে তা করা উচিত নয়। ডাক্তাররাও আন্দোলন করেন, কিন্তু জরুরি সেবা সচল রাখেন। শিক্ষকদেরও পরীক্ষা চালু রেখে আন্দোলন করার কথা ভাবা উচিত ছিল। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতো না। পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক–শিক্ষার্থীরা কালেক্টরেট চত্বরে বিক্ষোভ করেন এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানান।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মসূচি স্থগিত:
গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্মবিরতি সাময়িক স্থগিত ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় ফিরছেন তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়-এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা বাসমাশিস ঘোষিত কর্মবিরতি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বার্ষিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, তা অনুধাবন করে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও তাদের শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। তাই আগামীকাল (বুধবার) ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের একাংশের কর্মবিরতির মধ্যেই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি আরেক দলের
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ কামনা করছি, ভবিষ্যতে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে আর বাধাগ্রস্ত না হয়। যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৪ দফা দাবি:
১. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের’ গেজেট প্রকাশ।
২. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা।
৩. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া।
৪. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
প্রাথমিক শিক্ষকদের আরও কঠোর কর্মসূচি:
বেতন বৃদ্ধি ও গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালনের মাঝেই আরেকাংশ একই দাবিতে স্কুলে ‘তালা ঝোলানোর’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে মঙ্গলবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। তারা কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করেছেন। পরে একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এদিকে, একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চগ্রেডের জটিলতা নিরসন ও সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ অনুসারীরা বুধবারের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে তালা ঝোলানোর হুমকি দিয়েছেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, ঐক্য পরিষদ সোমবার রাতে ভার্চুয়ালি সভা করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সব সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক বন্ধুদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করার দায়িত্ব আমারই। তাই আসুন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। যারা শিক্ষকদের দাবি আদায়ে রক্ত এবং জীবন দিয়েছেন তাদের ঋণ শোধ করার নয়। যারা ইতিপূর্বে সাহসিকতার সাথে কর্মসূচি পালন করেছেন, তাদের প্রতি ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি চলছে। এদিকে একাদশ গ্রেডে বেতনের দাবিতে গতসপ্তাহের রোববার ও সোমবার অর্ধদিবস এবং মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ অনুসারীরা।