এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি পূরণে ব্যয় হবে ৩৪০০ কোটি টাকা, সরকারের গড়িমসির কারণ কী?

কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা
কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারের বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও মেডিকেল ভাতাও ও উৎসব ভাতা বাড়লে সরকারের আরও বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে শিক্ষক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) হারে বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ফের আল্টিমেটাম দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

আরও পড়ুন: আল্টিমেটাম দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা শিক্ষকদের

তিনি বলেন, ‘রাতের মধ্যে বাড়িভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আগামীকাল থেকে এক দফা জাতীয়করণের আন্দোলন শুরু করবে জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট।’

জানা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া বাস্তবায়নে বছরে সরকারের প্রয়োজন ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ১৫ শতাংশে প্রয়োজন ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি, আর ৫ শতাংশে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করার প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সিনিয়র শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে আরও বেশি পাবেন। এছাড়া চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে এক হাজার টাকা করার পরিকল্পনাও আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে একটি আধা সরকারি পত্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেন।

পত্রে উল্লেখ করা হয়, বাড়িভাড়া এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করা হলে এর জন্য অতিরিক্ত ৭৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন হবে।

তবে পরে মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব থেকে সরে এসে শতাংশের হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়। এরপর গত ৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে নতুন করে চিঠি পাঠায়, যেখানে ২০, ১৫, ১০ ও ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির আর্থিক প্রভাবের বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন কাঠামোয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সাড়া পাইনি। এবার যদি প্রজ্ঞাপন জারি না হয়, তাহলে আমরা জাতীয়করণের দাবিতে অনড় অবস্থানে যাব।’

অন্য শিক্ষক নেতারাও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনমান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। সরকারের সামান্য পদক্ষেপেই লাখো শিক্ষক-কর্মচারীর জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তাদের মত।

সরকারি গড়িমসিতে শিক্ষকদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। তারা বলছেন, শিক্ষকদের প্রতি যতটা দেরি করা হচ্ছে, সেটা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলা ছাড়া কিছু নয়। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও প্রবিধান পরিবর্তনের জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই সমাধান আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ