৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুযোগ চান ১৭তম নিবন্ধনের আবেদনবঞ্চিতরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ০৭:৫২ PM , আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫ PM
শিক্ষক নিয়োগের ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ দাবি করেছেন ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও একবারও আবেদনের সুযোগ না পাওয়া প্রার্থীরা। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বুধবার (১৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জনতা মঞ্চে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ১৭তম ব্যাচের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারী ও এনটিআরসিএ দাপ্তরিক কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত মোট ০৪ (চার) বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। নীতিমালা অনুসারে ১ বছরের নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ করতে ০৪ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় আমরা ১৭তম নিবন্ধনধারী প্রায় ৭৫০ জন প্রার্থী ৩৫ বছর উর্ধ্বে হয়ে যায়। করোনাকালীন সময়ক্ষেপণ এর বিষয়টি উক্ত ব্যাচের ( ১৭ তম) জন্য বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়নি, বিধায় আমরা ৫ম চাকরির গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারি নাই। আমরা এনটিআরসিএ কর্তৃক ২০২০ সালের সার্টিফিকেট ২০২৪ সালে পাওয়ার পরও একটি বারও কোন গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারি নাই।
তারা বলেন, এ বিষয়ে আমরা এনটিআরসিএ এর কর্তৃপক্ষকে করোনাকালীন ভুক্তভোগী বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ সুপারিশের অনুরোধ জানিয়ে, স্মারকলিপি প্রদানসহ একাধিকবার মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি এবং গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছি। ২০২৪ সালের পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও আমরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আন্দোলন করার ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে বারবার আমাদের সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ এবং প্রত্যেক সাক্ষাতে তারা আমদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য কৌশল অবলম্বন করে। যার ফলে প্রতিবারই আমরা প্রতারণার শিকার হয়ে থাকি।
পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী চেতনার আলোকে চরম বৈষম্যের শিকার ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন ব্যাচের আবেদন বঞ্চিত প্রার্থীদের জন্য করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতীতের ন্যায় আবারও ২০২৪ সালের ৭ আগষ্ট এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ১৭তম ব্যাচের জন্য প্রস্তাবনা পাঠায়।
আবেদনবঞ্চিতরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার আইনগত জটিলতা সাপেক্ষে শিক্ষা উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য পাঠায়। পরবর্তীতে আইন ও বিচার বিভাগের মতামত অনুবিভাগ বলেন ‘‘আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী সনদের মেয়াদ ৩ বছর থাকা সাপেক্ষে সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে ১৭তম ব্যাচের আবেদন বঞ্চিতদের নিয়োগ সুপারিশ এর আওতায় আনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলো।’’
সর্বশেষ আমাদের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরো অধিকতর যাচাই বাছাইয়ের জন্য এনটিআরসিএর বর্তমান চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি ইস্যু করে ২৭ মার্চ ২০২৫ । তারই ধারাবাহিকতায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান ৩৭.০৫.০০০০.০০৫.০৪.০০১.৩৩৫ সংখ্যক স্মারকের মাধ্যমে গত ৬ মে একটি রুপরেখা প্রেরন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর। রুপরেখার ১০ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, বিগত সময়ে প্রত্যেক গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের বয়সের ছাড় যেহেতু কর্তৃপক্ষের যুক্তিসংগত বিবেচনার উপর নির্ভরশীল হয়, যেহেতু ‘১৭তম নিবন্ধনধারীদের বিষয়ে আদালতে কোনো রিভিউ মামলা নেই। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ‘
তারা বলেন, ‘গত ১৫ জুন আমরা প্রেসক্লাব শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে থাকি। আমরা যখন আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন শুরু করি তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে আমাদের দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে এবং আমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করে। আমাদের পাঁচজন সদস্যের সাথে শিক্ষা উপদেষ্টা এবংসিনিয়র সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করে থাকে। অত:পর আমাদের পাঁচজন প্রতিনিধিকে পুলিশের এক কর্মকর্তা সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটে নিয়ে যায়। প্রায় ২ ঘন্টা আমাদেরকে বসিয়ে রাখে বলে যে অপেক্ষা করো উপর থেকে নির্দেশ আসলে তোমরা সাক্ষাৎ পাবে। কিন্তু ২ ঘন্টা পর পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে বলে উপদেষ্টা এমনকি কোন কর্মকর্তার সাথে দেখা করা সম্ভব না, আপনার চলে যান, পারলে আবার আন্দোলন করেন। আমরা হতাশ হয়ে চলে আসি এবং আমাদের আন্দোলনরত সকল ভুক্তভোগীকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা সবাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সচিবালয়ের গেইটের দিকে লংমার্চ করার প্রস্তুতি নিলে। হঠাৎ করে পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা আমাদের আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে প্রায় ১০ টির বেশি টিয়ারশেল এবং ০৭ টি সাউন্ড গ্রেনেড বিরতিহীনভাবে নিক্ষেপ করে। যার ফলে আমাদের প্রায় ৩০ জন সদস্য আহত হয়। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
তারা আরও বলেন, পরবর্তীতে খবর নিয়ে জানতে পারলাম যে অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর মিজানুর রহমান এর উস্কানিতে পুলিশ এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি পাশাপাশি যারা এহামলার সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছি। এ হামলায় আক্রান্ত ভুক্তভোগী প্রার্থীরা এখনো চিকিৎসার অভাবে মেডিকেলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের সু চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। পাশাপাশি আমাদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-
সদ্য প্রকাশিত ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৭তম নিবন্ধনে আবেদনবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করে সৃষ্ট জটিলতা সমাধান কর; আহতদের সুচিকিৎসার দেওয়ার।