টিউশনির টাকা জমিয়ে রেস্তোরাঁ দিলেন মেডিকেলের ছাত্র

তাসফিকুর রহমান
তাসফিকুর রহমান   © সংগৃহীত ছবি

ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিলো প্রকৌশলী পড়বেন। ভেবেছিলেন উদ্যোক্তা হবেন। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছা ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। তাদের ইচ্চা পূরন করতে ভর্তি হলেন মেডিকেলে। কিন্তু তবুও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন মরে যায়নি। তাইতো মেডিকেলে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনির টাকা জমিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসফিকুর রহমান।

আরও পড়ুন: চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে সফল নোবিপ্রবির শাকিল

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় তাসফিকুরের রেস্তোরাঁর নাম লাজানিয়া। ভারতীয়, চীনা, ইতালীয়সহ নানা ধাঁচের খাবার পাওয়া যায় এখানে। করোনায় ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এলেও হাল ছাড়েননি। এখন তাঁর রেস্তোরাঁয় কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ জন বেকার তরুণ-তরুণীর।

এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন তাসফিকুর। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ঢাকা মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে।

তাসফিক বলেন, বাবা সরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বড় হয়েছি তিনবোনের সঙ্গে। পরিবারে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় কখনো অভাব চোখে দেখিনি। কিন্তু চারপাশের দুস্থ মানুষের কষ্ট দেখলে খারাপ লাগতো। শৈশব থেকেই সব সময় চাইতাম এসব মানুষদের জন্য যেন কিছু করতে পারি। কিন্তু তখনতো সামার্থ্য ছিলনা তাই স্বপ্ন দেখতাম নিজে উপার্জন করে মানুষের জন্য কিছু করবো। সেই চিন্তা থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ।

মেডিকেল কলেজের ভর্তি কোচিং করিয়ে বগুড়া শহরে বেশ নামডাক করেছিলেন তাসফিকুর। কোচিংয়ে কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে ২০১৯ সালে তাঁর জমানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। সেই টাকায় শহরের রানার প্লাজার ফুডকোর্টে শুরুতে একজন অংশীদার নিয়ে ‘টুইন্স ক্যাফে’ নামে রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনার আঘাতে বন্ধ করে দিতে হয় এই উদ্যোগ। তাই বলে তাসফিকুর হাল ছাড়েননি। ২০২০ সালে আবার দ্বিগুণ উদ্যমে চালু করেন লাজানিয়া।

ব্যাবসা কেমন চলছে সেই প্রসঙ্গে জানান, ইতিমধ্যেই বিনিয়োগের অর্ধেক টাকা তুলতে পেরেছেন। রেস্টুরেন্টের আয় দিয়ে এখন অনেক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া, মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা ছাড়াও রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানী এবং বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনে (ছাত্রশাখা) যুক্ত আছেন তিনি।

আরও পড়ুন:  রাস্তায় ঘুমানো বস্তির সেই মেয়েটি এখন মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা

পড়ালেখার চাপ সামলে কীভাবে এত কিছু করেন? তাসফিক বললেন, প্রযুক্তির কল্যাণে কাজটি সহজ হয়েছে। রেস্তোরার আয়-ব্যায়ের হিসাব অনলাইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। ক্রেতারা কে কত টাকার খাবার অর্ডার করছেন আমি সব জানতে পারি। তবুও পড়ালেখার পাশাপাশি সবকিছু পরিচালনা করা অনেক কষ্টসাধ্য।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাসফিকুর বলেন, এমবিবিএস শেষে নিউরো সার্জারি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছে তাঁর। এ ছাড়া বগুড়া শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।


সর্বশেষ সংবাদ