হাফওয়ে টু এভারেস্ট: মিরসরাইয়ের ফাহিম শাহরিয়ারের জীবনের দুঃসাহসিক যাত্রা

এভারেস্টে ফাহিম শাহরিয়ার
এভারেস্টে ফাহিম শাহরিয়ার  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সন্তান ফাহিম শাহরিয়ার জীবনের এক দুঃসাহসিক অধ্যায় সম্পন্ন করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তিনি ছুঁয়েছেন জীবনের নতুন উচ্চতা। নিজের এই অসাধারণ অভিযাত্রার নাম দিয়েছেন তিনি ‘Halfway to Everest’।

ফাহিম জানান, তাঁর এ যাত্রা শুরু হয় ২০২৫ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বিকেল চারটার দিকে পৌঁছান নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। সেখানেই শেষ করেন পাহাড়ি অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি—অক্সিজেন সিলিন্ডার, পোশাক, ওষুধ, এক্সেসরিজসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটা।

পরদিন (৮ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রওনা দেন রামেচাপ এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। প্রায় ছয় ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে লেগে যায় ১২ ঘণ্টা। ৯ অক্টোবর সকাল সাতটায় রামেচাপ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলা এয়ারপোর্টের পথে উড্ডয়ন করেন তিনি। মাত্র ২৫ মিনিটের সেই ভয়ংকর আকাশযাত্রা শেষ হয় নিরাপদ অবতরণে।

সেদিন থেকেই শুরু হয় তাঁর পায়ে হাঁটা অভিযান। প্রথম দিন প্রায় ১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছান ফাকডিংয়ে। এরপর নামচে বাজার, তেংবুচে, ডিংবুচে, লোবুচে পেরিয়ে ১৬ অক্টোবর পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে (৫৩৬৪ মিটার /১৭,৫৯৮ ফুট)।

ফাহিম বলেন, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের প্রথম ধাপ। পথে অনেককে অক্সিজেনের ঘাটতিতে কষ্ট পেতে দেখেছি, কেউ কেউ মাঝপথেই ফিরে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ও সবার দোয়ায় আমি নিরাপদে শেষ করতে পেরেছি।

বেস ক্যাম্প জয় করার পরও থেমে থাকেননি ফাহিম। পরদিন আরও উত্তরে যাত্রা করেন গোকিও লেকের পথে। অতিক্রম করেন নেপালের সবচেয়ে বড় Ngozumpa Glacier, যা চীনের মাউন্ট চো-ওয়ো থেকে উৎপন্ন। ঝুঁকিপূর্ণ এই পথের মাঝে পাথরে পিছলে পড়ে পায়ে আঘাত পান তিনি। কিন্তু দৃঢ় মনোবলে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত গোকিও লেকে, যা পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম হ্রদ।
এরপর আরও এক চরম দুঃসাহসিক অধ্যায়ে অংশ নেন তিনি— Chola Pass (৫,৪২০ মিটার) অতিক্রম করেন।

সেই পথের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, পুরো যাত্রাটাই ছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলা। কখনও বরফের ওপর দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডায় গা চিটল, আবার কখনো পথ হারিয়ে গিয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমি ভিডিও আকারে তুলে ধরব।

ফাহিম শাহরিয়ার চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়ির সন্তান। তাঁর পিতা মোহাম্মদ ফারুক। ফাহিম খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নিজামপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।

ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সাহসী ও কৌতূহলী। শখের বসে কন্টেন্ট তৈরি শুরু করলেও আজ তিনি দেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ কনটেন্ট নির্মাতা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সব দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছেন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।

এভারেস্ট বেস ক্যাম্প অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফাহিম আরো বলেন, এই পথচলায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। যখন দেশের লাল-সবুজ পতাকা হাতে তুলে ধরলাম, বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করেছি। ইনশাল্লাহ, সামনে আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কিলিমাঞ্জারো পাহাড় জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ