দুর্ঘটনায় পা হারানো জান্নাত পেল জিপিএ-৫, হতে চান ডাক্তার 

মিফতাহুল জান্নাত
মিফতাহুল জান্নাত  © সংগৃহীত

দূর্ঘটনায় ডান পা হারানো মিফতাহুল জান্নাত। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়  সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। 

মিফতাহুল জান্নাত শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল সে। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে উল্টো দিক থেকে আসা বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেন।

মিফতাহুল জান্নাত বলে, ‘জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুশি। আমি ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্ট হোক, ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হব।

আরো পড়ুন: বাঁ হাতে লিখেই পেয়েছেন জিপিএ-৫, হতে চান ম্যাজিস্ট্রেট

মিফতাহুল জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম শার্শার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি কিরে মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। এতে রফিকুলের সাড়ে ১০ লাখ ব্যয় হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। 

মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে এই বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

রফিকুলের সম্পদ বলতে সাড়ে চার শতক জমি। এই জমির ওপর তিন কক্ষের একটি দালান। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। মিফতাহুল জান্নাত বড়। ছেলে মুন্তাকিম রাফি (৮) উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে তাঁর মাসে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।

জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, ‘মিফতাহুল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি। ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়। তা-ই দিয়ে ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। মিফতাহুল ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক, ওকে আমি শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।’

বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরও সে মনোবল হারায়নি। মিফতাহুল গরিব পরিবার থেকে এসেছে। আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় খুবই ভালো করবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence