সড়ক দুর্ঘটনা রুখতে ডিভাইস বানালেন দুই ছাত্রী
- মোরশেদা ইয়াসমিন পিউ
- প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:০৬ PM , আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৫১ PM
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নতুন ডিভাইস তৈরি করেছেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের দুইজন শিক্ষার্থী। এরা হলেন, ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী সুমাইয়া শরীফ ও ফারজানা আক্তার। তারা ডিভাইসের নাম দিয়েছেন— দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ ডিভাইস। যা মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় তৈরি সম্ভব বলে জানান। ডিভাইস তৈরিতে গাইড শিক্ষক হিসেবে ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান ইনেসট্রাক্টর জুবায়দা ইকবাল।
ছোট্ট এই ডিভাইসটি কোনো যানবাহনে সংযুক্ত থাকলে, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে কিংবা গাড়ির সামনে মানুষ বা অন্য কোনো বস্তু পড়লে, যদি সেটা চালক কুয়াশার কারণে বা অন্য কোনো কারণে বুঝতে না পারে কিংবা তার গাড়ির গতি দ্রুত থাকে, তাহলে ডিভাইসটি গতি কমিয়ে দেবে এবং সংকেত দিয়ে চালককে সচেতন করবে। অথবা চালক ঘুমিয়ে পড়লেও ডিভাইস সংকেত দেবে। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে, দুর্ঘটনার স্থান, গাড়ির নম্বর, নামসহ জরুরি তথ্য ডিভাইসটি প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাত্ক্ষণিক পৌঁছে দেবে। যেমন- গাড়ির সামনে না পেছনে দুর্ঘটনা হয়েছে এসব তথ্য পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালে পৌঁছে দেবে। জরুরি সেবা পেলে দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাপ কমে আসবে।
ইনেস্ট্রাক্টর জুবায়দা ইকবাল বলেন, আমরা এটাকে আরেকটু মডিফাই করছি। এর এরিয়াটা একটু বাড়াতে চাচ্ছি। কারণ এটা শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে তাৎক্ষণিক একটা ভাবনা থেকে। আগামী ১৫-১৬ তারিখে আইডিইবি ভবনে মেলা আছে, সেখানে আমাদের মেয়েরা এটা প্রদর্শন করবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রজেক্ট ‘এ টু আই’ এই ডিভাইস উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আইডিইবি সহযোগিতা করেছে। ডিভাইসটি ব্যবহারের উপযোগী। এখন সরকার বা বড় কোনো কোম্পানি যদি এটা নিতে চায়; তাহলে আমরা এটা দিতে পারব।
শিক্ষার্থী সুমাইয়া শরীফ বলেন, দেশের অনেক সমস্যার ভেতর আমাদের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি সবার আগে এসেছে। আমি চাই এটা ডেভেলপ করে প্রতিটা বাসে এটা সংযোজন করা হোক। জনগণ যেন এই ডিভাইসের উপকারটা নিতে পারে। জনগণ যেন নির্ভয়ে বাইরে যেতে পারে। ফারজানা আক্তার বলেন, এই ডিভাইসটি ফটোসেন্সরের মাধ্যমে কাজটি করবে। এটি তৈরিতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লেগেছে। এ কাজে তারা প্রতিদিন সময় দিয়েছেন ৭/৮ ঘণ্টা।
জোবায়দা ইকবাল বলেন, প্রতি সেমিস্টারে আমরা শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট প্রজেক্ট করাই। তবে ফাইনাল সেমিস্টারে একটু বড় ধরনের প্রজেক্ট করাই। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এই ডিভাইস তৈরি করা। আমাদের সপ্তম সেমিস্টারের দুই শিক্ষার্থী সুমাইয়া শরীফ ও ফারজানা আক্তার এই সড়ক দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ ডিভাইজের প্রোপজাল দেয়। আইডিয়াটা চমত্কার ভেবে আমরা আগাই। কিন্তু এটা তৈরির জন্যে সপ্তম সেমিস্টারের সবার কাছে থেকে টাকা তুলতে হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সবসময় প্রজেক্টের জন্যে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা করা সম্ভব হয় না। সব শিক্ষার্থী টাকা দিয়েছে। তবে প্রোজেক্টের কাজ করেছে সুমাইয়া ও ফারজানা। তাদের সহযোগিতা করেছে প্রাফট ইনস্ট্রাকটর মো. আলমগীর হোসেন ও মো. পারভেজ হোসেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের আয়োজনে একটা মেলা হয়েছিল আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেই মেলাতে এ প্রোজেক্ট দ্বিতীয় হয়। তখন বিবিসি বাংলা এই ডিভাইসের একটা ভিডিও করে। রাজধানীর রমিজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয় তখন এই ডিভাইসের ভিডিও বিবিসি বাংলা প্রচার করতে শুরু করে। এরপর আলোচনায় আসে আমাদের এই প্রোজেক্ট।
সংগৃহীত