২৩ পরিবারের এক গ্রামে ৭ জন বিসিএস ক্যাডার

বিসিএস-ক্যাডার
বিসিএস-ক্যাডার  © সংগৃহীত

ছোট-বড় ২৩ পরিবার নিয়ে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম দিলজানবাড়ি। এই গ্রাম থেকে এ পর্যন্ত বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন ৭ জন। এছাড়া পরিবারগুলোর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ১৮ জন বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। এর বাইরেও অনেকে হয়েছেন শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সম্মানজনক পেশার কর্তা।

গ্রামটি থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়াদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) সুপারিশপ্রাপ্ত সাবেক জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা মোজাফ্ফর আহমদের দুই ছেলে মোয়াজ্জেম হোসাইন রিমন ও তোফাজ্জল হোছাইন সুমন। মোয়াজ্জেম হোসেন সুপারিশ পেয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারে আর সুমন আহম্মেদ প্রশাসন ক্যাডারে।

তোফাজ্জল হোছাইন সুমন বলেন, মেধা, পরিশ্রম, চেষ্টা, হার না মানার মানসিকতা নিয়ে দুইভাই বিসিএস জার্নিতে লেগেই ছিলাম। সফলতাও একসঙ্গে পেলাম। মায়ের ইচ্ছে ছিল আমরা দু’জন ক্যাডার হব। এজন্য মা অনেক হাড়ভাঙা পরিশ্রমও করেছেন। আর বাবা ছিলেন সব প্রতিকূলতার বটবৃক্ষ। 

শুধু সুমন-রিমন নয়, এই ছোট্ট গ্রাম থেকে এর আগে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন আরও পাঁচজন। তারা হলেন- মাস্টার সালেহ আহমদের ছেলে-মেয়ে রাসেলুল কাদের (২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডার) ও মাসুমা জান্নাত (৩৫তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডার), নুরুল ইসলামের ছেলে মনসুর আলম কাদেরী (৩০তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডার), মাস্টার মফিজুর রহমানের মেয়ে মনোয়ারা আকতার রিফাত (৩৮তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডার) এবং ব্যবসায়ী ছাবের আহমদের ছেলে মো. খালেদ হোসাইন (৪০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার)। 

এদের মধ্যে রাসেল বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে উপসচিব, মনসুর এডিশনাল এসপি, মাসুমা ইউএনও, রিফাত এএসপি ও খালেদ শিক্ষক। রাসেলের ছোট ভাই আসিফুল কাদের আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জয়েন্ট ডিরেক্টর।

আরও পড়ুন: বিসিএসের নেশায় সরকারি চাকরি ছেড়েছিলেন প্রশাসন ক্যাডারে ৭ম কামরুল

দিলজান বাড়ির প্রথম বিসিএস ক্যাডার রাসেলুল কাদের পড়াশোনায় ছিলেন দুর্দান্ত। রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। সেখানে থেকে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে প্রভাষক (ইংরেজি) হিসেবে যোগ দেন। এরপর আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে মনোনীত হয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।

রাসেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি ভালোলাগা শুরু হয়। বাবা-মা দু’জনেই উৎসাহ দিতেন। বাবা প্রধান শিক্ষক ও মা রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম মেট্রিক পাস করা মেয়ে। প্রত্যন্ত গ্রাম দিলজান বাড়িতে পড়ালেখার অনুকূল পরিবেশ ও মা-বাবার কড়াকড়ি শাসনের কারণে আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন- দাদা আবদুল কাদের মুন্সি ১৯১৯ সালের এন্ট্রান্স পাস। ছোট দাদা মৌলভি আবদুস ছালাম রাজাখালী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন। তাদের অনুপ্রেরণাই আমার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা। দিলজানপাড়ায় এখন ৭ জন বিসিএস ক্যাডার। আমার আশা- আগামী ১০ বছরে পেকুয়া তথা রাজাখালীর প্রতিটি গ্রাম হতে বিসিএস ক্যাডার হবে। এজন্য সবাইকে প্রকৃত পড়ালেখা করতে হবে। আমি সবসময় মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

এ পর্যন্ত দিলজানবাড়ি থেকে ৭ জন ক্যাডার হলেও ২৩ পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অন্তত ১৮ জন ক্যাডার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মরহুম ফররুখ আহমেদের নাতি আওলাদুল হাসান মিনার ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। ব্যবসায়ী ছাবের আহমেদের নাতনি তানিয়া তাসকিন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এ বাড়িরই আরেক নাতি আবু শিহাব মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আরেক নাতি জুনায়েদ সিনিয়র সহকারী জজ এবং আবদুর রহমান মোহাম্মদ তামিম, সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত।

শুধু বিসিএস নয় এই গ্রাম থেকে হয়েছেন ১৮ জন শিক্ষক এবং আরও অনেকে বিভিন্ন সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই গ্রামের ব্যবসায়ী বজল আহমদের ছেলে ক্যাপ্টেন মিসবাহ উদ্দিন মানিক জাপানের বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। এবং ক্যাপ্টেন মানিকের ভাই মোহাম্মদ নজিব উদ্দীন বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের অফিসার ক্যাডেট। এছাড়াও মো. নেজাম উদ্দীনের ছেলে মাসুম রিয়াদ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সহকারী ইঞ্জিনিয়ার।

মার্চেন্ট মেরিন অফিসার ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মিছবাহ উদ্দীন বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পড়ালেখা করে আমার এই সফলতা। বাড়িতে সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও পড়ালেখার পরিবেশ ছিল খুব ভালো। বাবা-মা, বড়ভাই- বড়বোনরা সবসময় পড়ালেখার তদারকি করতেন। আল্লাহ রহমত ছিল বলেই এতদূর এসেছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence