পাওয়ার পলিটিক্স নয়, রিসার্চ পলিটিক্সে গুরুত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের

লোগো
লোগো  © সংগৃহীত

সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে নানামূখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে সংগঠনটির এই ইউনিটটিকে। কমিটি ঘোষণার পর প্রায় সবগুলো ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধার মুখে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, তারা মূল ধারায় চলমান রাজনীতি নয় বরং শিক্ষা ও গবেষণাসহ নানামুখী শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে ফোকাস করছেন। যেখানে পাওয়ার পলিটিক্সের পরিবর্তে গুরুত্ব পাচ্ছে রিসার্চ পলিটিক্স।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ক্যাম্পাসগুলোতে যেভাবে শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১’কে বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য তারা রাজনীতির মূল ধারার বাইরে গিয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় বেশি ফোকাস করছেন।

জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আগামীর বাংলাদেশের জন্য দক্ষ ও সুনাগরিক তৈরি করতে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি, আমরা স্কিল ডেভেলপন্ট ও নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের ইউনিটগুলো এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সর্বোপরি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বির্নিমানে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিচ্ছি।’’

শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি জানান, ২০০৮ সাল থেকে কাজ শুরু এবং ২০১২ সালে কমিটি গঠনের পর তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য নানা শিক্ষামূলক ও শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। আপামর শিক্ষার্থীদের নানা দাবি আদায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকায় জনসমর্থন রয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে পারছি।

আরও পড়ুন: রাজনীতি ঠেকাতে মরিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বলছে ছাত্রলীগ

সর্বশেষ গত দুই-তিন মাসে ঢাকার মধ্যে ১২টি ও ঢাকার বাইরে ৬টা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। নতুন ঘোষিত উল্লেখযোগ্য ৮টি ইউনিট হলো- ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঈশা খাঁ ইউনিভার্সিটি (কিশোরগঞ্জ), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

নতুন ইউনিটগুলোর কমিটি নিয়ে আজিজুল বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯টি ইউনিটে কমিটি করা হয়েছে। এসব ইউনিটগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলার পথকে প্রশস্ত রাখতে ইউনিটগুলো কাজ করছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সুযোগ ছিল না। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ছাত্রলীগ ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করার পর শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এ পরিস্থিতিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানাতে মরিয়া।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী সংখ্যায় শীর্ষ ১০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে, সর্বশেষ ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষণার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তদের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য কঠোরভাবে নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলেছে, তারা তাদের ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তার সদস্যদের যেকোনো ক্লাব বা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। নেতৃত্বের বিকাশের জন্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নে তারা রাজনীতির চেয়েও ক্লাব কার্যক্রমকে বেশি উৎসাহিত করে। আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থগিত বা বরখাস্ত করার মতো হুমকিও আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জানান, দেশে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আগে থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। মারামারি, চাঁদাবাজিসহ অনেক কিছুতে জড়িয়ে পড়ে তারা। এখন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ছাত্র রাজনীতি অনেকেই ভালোভাবে নেন না। সে কারণে হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনীতির অনুমতি দিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, গবেষক, লেখক রউফুল আলম এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি প্রবেশ করলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে এবং ভিনসেন্ট চ‍্যাং (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) এর মত উপাচার্যরা আর দায়িত্ব পালন করবেন না।

আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দিচ্ছে ছাত্রদল

যদিও ছাত্রলীগের দাবি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাওয়ার পলিটিক্সের পরিবর্তে রিসার্চ পলিটিক্সে গুরুত্ব দিচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট বলেন, ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেগুলোতে আমাদের কমিটি রয়েছে, সবাই এ নীতি অনুসরণ করছে। ছাত্রলীগের এ রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে সেটির উন্নয়নেও নতুন কমিটিগুলো কাজ করবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে দোদুল্যমান ছাত্ররাজনীতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোণঠাসা হয়ে অনেকটাই বন্দি হয়ে গেছে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে। যার ফলে দলগুলো তাদের কার্যক্রমগুলোকে সাজাচ্ছে অনেকটাই সামাজিক পরিসরে। তাতে রাজনৈতিক আবহ থাকলেও চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শিক রাজনীতির ভাবমূর্তি তুলে ধরা এবং ছাত্ররাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।


সর্বশেষ সংবাদ