এআই চ্যাটবটে আবেগ খুঁজছে কিশোররা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫২ PM , আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪১ PM
যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীরা এখন আবেগীয় সংযোগ, পরামর্শ ও সঙ্গী হিসেবে ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক চ্যাটবটের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। মার্কিন অলাভজনক সংস্থা কমনসেন্স মিডিয়ার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির ৭০ শতাংশের বেশি কিশোর-কিশোরী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ নিয়মিত এসব টুল ব্যবহার করছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গবেষণার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হ্যাট (সিসিডিএইচ) জানিয়েছে, বর্তমান প্রজন্ম এসব চ্যাটবটকে পড়াশোনার সহযোগী হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আবেগীয় পরামর্শদাতা হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিন্তু পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে অনেক সময়ই কিশোর-কিশোরীরা এমন ডিজিটাল পরিবেশে ঢুকে পড়ছে, যা সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু তরুণদের জন্য কেবল তথ্য খোঁজার মাধ্যম নয়, বরং প্রতিক্রিয়াশীল, বন্ধুসুলভ কথোপকথনের অংশীদার হয়ে উঠেছে। ওপেন এআই-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেন, অনেক তরুণ চ্যাটজিপিটির সহযোগিতা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চ্যাটবটকে জিজ্ঞেস করে তাদের সিদ্ধান্ত নেন।
সিসিডিএইচের গবেষকরা নিজের ১৩ বছর বয়সী পরিচয় দিয়ে চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথন চালায়। তারা চ্যাটবটকে ১ হাজার ২০০ অধিক প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের উত্তরে চ্যাটবট বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা করলেও অনেক সময় তা মাদক সেবন, অতিরিক্ত ডায়েটিং কিংবা নিজের ক্ষতি করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রশ্নের উত্তরের অর্ধেকের বেশি ছিল ‘বিপজ্জনক’ পরামর্শ। উদ্বেগ প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার্থীরা বড়দের থেকে চ্যাটবটকে অধিক নিরাপদ বন্ধু কিংবা পরামর্শদাতা মনে করায় ঝুঁকি বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এআই টুল ব্যবহারের হার বেড়েই চলছে। এখন স্কুল পর্যায়ে বয়সভিত্তিক ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রাম চালুর করা উচিত। এসব প্রোগ্রাম শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারের নিয়ম শেখানোর পাশাপাশি এআই সিস্টেম কীভাবে কাজ করে, কি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে সেই বিষয় শেখাবে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে তারা বুঝতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুল বা বিভ্রান্তিকর উত্তর দিতে পারে এবং এটা একটা মেশিন হওয়ায় মানুষের মতো সহানুভূতি নেই।
আরও পড়ুন: ২৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও কুইনের ক্লাস করা হলো না একটিতেও
চ্যাটজিপিটি বলছে তারা ১৩ বছরের কমবয়সী ব্যবহারকারীর জন্য নয়, কিন্তু বাস্তবতা হলও বয়স যাচাইকরণে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। যদি ব্যবহারকারীরা জন্মতারিখের সঠিক তথ্য দেয়, তখন কার্যকরভাবে তথ্য যাচাই করতে পারে। আর এই সুযোগ নিয়ে সিসিডিএইচ গবেষকরা এমন স্পর্শকাতর তথ্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়।
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম যেমন ইন্সটাগ্রাম ও টিকটক বয়স যাচাইকরণের ব্যবস্থা চালু করলেও , চ্যাটবট এই দিকে এখনও পিছিয়ে রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কিশোরদের জন্য চ্যাটজিপিটিকে বয়স যাচাইকরণের সীমাবদ্ধতার কারণে ‘মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। কারণ শিক্ষার্থীরা সহজেই এটার অপব্যবহার করে ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই নতুন করে ভাবতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোর ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে। এটি আর শুধু একটি ক্লাস বা প্রযুক্তি ক্লাবের বিষয় নয়, বরং প্রতিটি বিষয়ে একে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে-অ্যালগরিদম কীভাবে কাজ করে, কীভাবে পক্ষপাত বা চাটুকারতা এআই উত্তরে ঢুকে যেতে পারে। এছাড়াও, চ্যাটবট কীভাবে ভালো পরামর্শ দেয় এবং কি ধরনের ক্ষতিকর তথ্য দিয়ে থাকে।
গত জুলাই মাসে জেপিমর্গান চেইজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমান বিশ্বে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০০ মিলিয়নের বেশি। অর্থাৎ, এআই টুল এখন তরুণদের জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। আর এজন্য কিশোরদের চ্যাটবটকে নিরাপদ ও সচেতন ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্কুলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। কমনসেন্স মিডিয়া ও সিসিডিএইচ বলছে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নয়, বরং সচেতন ও পাঠ্যক্রম-ভিত্তিক ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে এই গবেষণা করা হয়েছে।