নোয়াখালীতে বিলুপ্তপ্রায় বিদ্যালয়কে স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনার দাবি
- নোয়াখালী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২২ AM
বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার ও সোনাইমুড়ী উপজেলার কৃতি সন্তান প্রয়াত আবুল খায়ের এর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় কালের বিবর্তনে আজ ধ্বংসের পথে। ইতিহাসের পুরানো এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ থাকলেও জৌলুস হারিয়ে আজ বিলুপ্তপ্রায়।
যেখানে একসময় হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর পদচারণায় মুখরিত ছিল প্রাণের ক্যাম্পাস। সেখানে আজ নিরবতায়-নিস্তব্ধে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ। জরাজীর্ণ কক্ষে শত না ফুরানো শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে কোনোমতে পাঠদান। শিক্ষকদের উদাসীনতা কিংবা অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতায় এসএসসি ফলাফলে মাথায় হাত। অথচ এ প্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান অর্জন করে শিক্ষার্থীরা দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সোনাইমুড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয়কে স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সফি উল্যাহর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন NCTB এর উপসচিব ও প্রাক্তন ছাত্র আবু নাছের টুকু, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও প্রাক্তন ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার মনির উল্যাহ, পিজি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রাক্তন ছাত্র ডা. আতা উল্যাহ বিপ্লব, বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও প্রাক্তন ছাত্র ডা. সালেহ আহমেদ সোহেল, এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ও প্রাক্তন ছাত্র সাইফুল ইসলাম আলম, প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন উজ্জল, অস্ট্রেলিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তাহেরুল হক মানিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মোশাররফ হেসেন মিলন, প্রাক্তন ছাত্র সজীব আরাফাত ইয়ামিন ও তারেক আবির তন্ময় প্রমুখ
জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে অথ্যাৎ ১৯৬০ সালে বৃহত্তর নোয়াখালীতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ছিল নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্নের শুরু থেকে আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে চালানো হতো এ প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধিকে জানায়, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঠিলকঠাক ভাবে চলছিল শ্রেণি কার্যক্রম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ এগিয়ে থাকলে বর্তমানে গৌরবান্বিত এই প্রতিষ্ঠানটির করুণ দশা। যার কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, “একটি কুচক্রী মহল নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও মালিকপক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। যার ফলে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে অপসারণ, ২০১২ সালে স্কুলের শিক্ষকরা বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির মান ক্ষুন্ন হওয়ায় সবধরনের অর্থায়ন ও সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।”
স্থানীয়দের মতে, শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং ধ্বংসস্তুপ থেকে স্বগৌরবে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আবারো আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আবুল খায়ের গ্রুপ যেভাবে মানুষের কল্যাণে এগিয়ে সেভাবে এ অঞ্চলের মানুষ তাদের নিকট দায়বদ্ধ ও কৃতজ্ঞ। এসময় স্থানীয়রা অতীতের সকল ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্থে কোম্পানিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।