মাস্টার্স-পিএইচডি’র জন্য পাবলিকেশন জরুরি কিনা?
- এসএম নাদিম মাহমুদ
- প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৯:২৬ PM , আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৯:২৬ PM
বিদেশে পড়তে আসা আগ্রহীদের কাছ থেকে আমি সব সময় এক ধরনের ইমেইল বা ইনবক্স পাচ্ছি তাহলো- পাবলিকেশন। অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, ভাই আমার পাবলিকেশন নেই, আমি তো বাহিরে আবেদন করতে পাচ্ছি না। পাবলিকেশন ছাড়া কি স্কলারশিপ আবেদন করা সম্ভব কী? তাই এই বিষয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। আসলে দেশের বাহিরে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করার জন্য গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রকাশনা থাকা কতটা জরুরি?
দেখুন, আপনি যখন মাস্টার্স করতে যাবেন, তখন আপনি স্নাতক শেষ করেই আসবেন। বাংলাদেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে, তাতে স্নাতক শেষ বর্ষে উঠার পর ফিল্ড ওয়ার্ক কিংবা ইন্টার্নশিপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। সেখান থেকে গবেষণা করার কিংবা প্রকাশনা করার মতো যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দেশের বাহিরে যারা সায়েন্সের বিষয়গুলোতে স্নাতক করছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের পর চতুর্থ বর্ষ থেকে একটি নিদিষ্ট ল্যাবে গবেষণা করতে হয়। সেখানে মূলত গবেষণার মৌলিক কিছু বিষয় শেখানো হয়। খুব অসাধারণ কোন ছাত্র না হলে, এই এক বছরে কখনোই কোন প্রকাশনা করা সম্ভব হয় না।
যেহেতু আমাদের দেশে এই ধরনের কোন সুযোগ থাকে না, সেহেতু মাস্টার্স বাহিরে করতে আসলে, প্রকাশনা থাকা কখনোই মূখ্য বিষয় নয়। এখানকার অধ্যাপকরা জানে, একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট পাশ করা ছাত্রের পক্ষে কখনোই কোন প্রকাশনা বের করা সম্ভব নয়। তাই এই কথা অকপটে মেনে নেয়া শ্রেয়, মাস্টার্সে আবেদনের জন্য কোন গবেষণা প্রবন্ধ প্রয়োজন নেই।
পিএইচডিতে ভর্তি জন্য, অনেকেই মনে করেন, প্রকাশনা না থাকলে আবেদন করা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত শিক্ষকরাও এই মুলা ঝুলিয়ে মাস্টার্সের থিসিসে একজন শিক্ষার্থীকে প্রকাশনার জন্য তাগিদ দেয়। এমন কি মাস্টার্সের ফলাফলের পরও অনেক শিক্ষার্থীকে আটকিয়ে কাজ করে নেয়া হয়। আর প্রকাশনার জন্য দিনের পর দিন ঘুরানো হয়। যেটি আমার ভাষায় সম্পূন্ন অনৈতিক। এই শিক্ষকদের বিভ্রান্তকর তথ্যের জন্য বিদেশে পিএইচডি করতে আসা শিক্ষার্থীদের বছর পর বছর বৃথা সময় নষ্ট করে দেয়। কিন্তু পিএইচডি আবেদনের জন্য আদৌও্ কি গবেষণার প্রকাশনার প্রয়োজন আছে?
না নেই। প্রয়োজন নেই। কারণ, মাস্টার্স করা অবস্থায় সিংহভাগ শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট/থিসিসের বিষয়ে সফল হওয়া কখনোই সম্ভব হয় না। আর সেটা সফল না হলে কখনো প্রকাশনা করা সম্ভব নয়। এই দিনের মত সত্য কথাটি বুঝানোর মত শক্তি আমাদের শিক্ষকদের থাকে না। যারা আপনাকে পিএইচডির জন্য ডাকবে, তারা জানে, আপনার প্রকাশনা থাকার সম্ভবনা জিরো। আবেদনে যেটুকু তারা বিবেচনা করে তাহলো, আপনি মাস্টার্সে থিসিস কোন বিষয়ের উপর করেছেন, এই সময়টুকুতে কোন কোন টেকনিক আপনি আয়ত্ত্ব করেছেন। এর বাহিরে পিএইচডি আবেদনের মূল্যায়নের কোন যোগ্যতার মাপকাঠি হয় না।
অনেক ছেলে-মেয়েকে দেখেছি কয়েক হালি প্রকাশনার তালিকা নিয়ে আবেদন করে, কিন্তু যারা মূল্যায়ন করে তারা কখনো আপনার কাছ থেকে এই ধরনের প্রকাশনা আসা করে না। আর কারো যদি থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাল। আর নেই থাকলে দোষের কিছু নেই। তাই এইসব প্রকাশনার জন্য দিনের পর দিন মাথা না ঘামিয়ে আবেদনে নেমে পড়ুন। মনে রাখবেন, আপনার ইচ্ছে শক্তি, আপনার বড় যোগ্যতা। লেগে থাকুন, দেখবেন এক সময় সফল হবেন।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
ইমেইল: nadim.ru@gmail.com