ছগিরা ও কবিরা গুনাহ: পাপের স্তর ও শাস্তির পরিসীমা

ছগিরা ও কবিরা গুনাহ
ছগিরা ও কবিরা গুনাহ  © সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মে পাপকে সাধারণভাবে “গুনাহ” বলা হয়। আরবি শব্দ ‘কবিরা’ অর্থে বোঝায় বড়, আর ‘ছগিরা’ অর্থ ছোট। তাই কবিরা গুনাহ মানে বড় পাপ এবং ছগিরা গুনাহ হলো ছোট পাপ। এদের বহুবচন হয় যথাক্রমে কাবায়ের এবং ছগায়ের।

পাপের আরবি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়—মাছিয়াত, ইছম, তুগইয়ান, জুরম, ফিসক ইত্যাদি। ফারসি, উর্দু ও হিন্দিতে ব্যবহৃত হয় গুনাহ, খতা, বদ ও বদী ইত্যাদি শব্দ।

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে পাপ হলো—আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা, তাঁর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা বা আদেশ পালনে অবহেলা করা। পাপ বড় হোক বা ছোট, তা সর্বাবস্থায় ত্যাজ্য। কোনো ছোট পাপকেও হালকাভাবে দেখা বা গুরুত্বহীন মনে করাও নিজেই একটি বড় পাপ বা কবিরা গুনাহ।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পাপকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: ছগিরা গুনাহ (ছোট পাপ): যেসব কাজের জন্য শরিয়তে নির্দিষ্ট কোনো শাস্তি বর্ণিত হয়নি এবং যেগুলো মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বলে গণ্য হয়।

কবিরা গুনাহ (বড় পাপ): যেসব পাপের জন্য কোরআন-হাদিসে জাহান্নাম, আগুন, নির্দিষ্ট শাস্তি বা সরাসরি আজাবের হুমকি উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলো কবিরা গুনাহ। এই সব কাজকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ: কুফর ও শিরক কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি হলো কুফর ও শিরক।

কুফর অর্থ: গোপন করা, ঢেকে রাখা, অকৃতজ্ঞতা। পরিভাষায় কুফর হলো আল্লাহর অস্তিত্ব বা সত্তা অস্বীকার করা। এটি এমন একটি গুনাহ, যার কোনো ক্ষমা নেই যদি কেউ তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে।

শিরক অর্থ: আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে উপাসনায়, গুণাবলীতে বা সত্তায় অংশীদার করা। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করেছে—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করা ক্ষমা করেন না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮)। শিরককে কোরআনে ‘চরম জুলুম’ বলা হয়েছে। (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৩)

কবিরা গুনাহের পরিণতি
কোনো ব্যক্তি যদি একটি মাত্র কবিরা গুনাহ করেও তার জন্য তওবা না করে, তবে তাকে তার জন্য জাহান্নামে যেতে হতে পারে। তবে ঈমান থাকলে দীর্ঘ শাস্তিভোগের পর আল্লাহর দয়ায় মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।

হাদিসে রয়েছে—‘যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি, ইমান অধ্যায়)। আরও এসেছে—‘আমার উম্মতের কবিরা গুনাহকারীদের জন্য আমি সুপারিশ করব।’ (বুখারি, আল-মুসনাদ)

ছগিরা গুনাহের ক্ষমা
ছগিরা গুনাহ সাধারণত নেক আমলের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। এর জন্য বিচারে আলাদা করে প্রশ্ন তোলা হবে না। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকো, তবে তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেব।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩১)

কোরআনে যেসব আয়াতে কবিরা গুনাহের কারণে ‘চিরস্থায়ী জাহান্নাম’-এর কথা বলা হয়েছে, তফসিরবিদগণ তার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘চিরস্থায়ী’ বলতে বোঝানো হয়েছে—দীর্ঘ সময়, চিরকাল নয়। কারণ হাদিস ও কোরআনের অন্যান্য বর্ণনায় ঈমানদারদের জন্য মুক্তির সুসংবাদ রয়েছে।

মুমিনের দায়িত্ব হলো—ছোট-বড় সব পাপ থেকে দূরে থাকা, বিশেষত কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আর শিরক থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকা—এটাই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence