বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান
- সৌম্য সরকার, বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৪ PM , আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৪ PM
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জনি পারভিনের ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, হয়রানী ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে বিভাগীয় প্রধানের পদ হতে অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন তারা। এ সময় তারা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
লিখিত অভিযোগে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, অর্থনীতি বিভাগ সেশনজটমুক্ত ও আইকিউএসি রেটিংয়ে প্রথম স্থানপ্রাপ্ত বিভাগ ছিল। কিন্তু জনি পারভীন বিভাগীয় প্রধান হওয়ার পর থেকে লাগাতার অনুপস্থিত থাকছেন। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অনলাইনে ক্লাস চালু করলেও তিনি এক বছর সাত মাসেও কোনো একাডেমিক সভা আহ্বান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। ফলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছে বলে বিভাগটির ৬জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আইনজীবীর পরামর্শে’ ঠিক হয় কৃষি গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, জনি পারভীন একাডেমিক কমিটির প্রথম সভায় বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে উপাচার্যকে অন্তর্ভুক্ত করেন। কমিটি নিয়মের বহির্ভূত হওয়ায় বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন পদত্যাগ করেন। অনুপস্থিতির কারণে তার ডেস্কে বিভিন্ন আবেদনপত্র ও জরুরি কাগজপত্র আটকে থাকছে।
এছাড়াও, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভাগের শিক্ষকদের মতামতের প্রধান্য না দিয়ে নিজের একক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনড় থাকেন। এমনকি শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেন। অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি জনি পারভিনের অসদাচরণের কথাও উল্লেখ করেন শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন: তিন দিনের অত্যাচারে ইলমার মৃত্যু, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি বাবার
এদিকে, বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে সহযোগী অধ্যাপক পদে এবং প্রভাষক কাজী নেওয়াজ মোস্তফার আপগ্রেডেশনের জন্য অভিজ্ঞতা সনদ ও অগ্রায়নের আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘ দেড় বছর সময় ধরে প্রেরণ না করে গড়িমসি করার অভিযোগও তুলেছেন তারা। আন্দোলনকারীরা আরও জানান, বিভাগীয় শিক্ষকদের যেকোন আবেদনপত্র ফরওয়ার্ডিং এর জন্য ডকুমেন্ট বিভাগের অফিসে জমা দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তিনি বিভাগের অফিসে শিক্ষকদের তার অনুমতি ছাড়া কোন ধরণের আবেদনপত্র ফরওয়ার্ডিং এর জন্য ডকুমেন্ট জমা নিতেও নিষেধ করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন এবং প্রভাষক কাজী নেওয়াজ মোস্তফা স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দিতে চান অধিকাংশ উপাচার্য
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনি পারভীন বলেন, যারা অনিয়ম করেছে, দুর্নীতি করেছে, শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট না দিয়ে আটকিয়ে রেখেছে, তিনটি এ্যাকাডেমিক মিটিং এ আসেনি, তারাই আজ আন্দোলন করছে। আমি বিষয়টি ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। তাদের এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। পুরো বিষয়টি আমি প্রেস কানফারেন্স করে জানাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. গোলাম রব্বানী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা সেটা সমাধানের জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিভাগীয় প্রধানের অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা নিয়েই প্রশাসন কাজ করছে। অতি দ্রুতই তা সমাধান হবে বলে আশা করছি।