সাত কলেজে চাঙ্গা হচ্ছে সেশনজট

সাত কলেজ
সাত কলেজ  © লোগো

করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবারও ভয়াবহ সেশনজটের মুখোমুখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। সময়মত পরীক্ষা না হওয়া, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, গণহারে ফেল, একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকাসহ নানা সমস্যার মাঝেই নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে সেশনজট। এমন অবস্থায় অনাগত ভবিষ্যতের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে শঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, সাত কলেজের স্নাতোকোত্তর শেষ পর্ব ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী ২০১৮ সালে, স্নাতোকোত্তর প্রিলিমিনারি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী ২০১৭ সালে এবং ডিগ্রি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী ২০১৮ সালে হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।

ঢাকা কলেজের স্নাতোকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, মাস্টার্স ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। এখন করোনার অজুহাতে সাত কলেজের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া আমাদের সহপাঠী বন্ধুরা করোনার আগেই স্নাতকোত্তর শেষ করেছে। এরপর সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিচ্ছে। কিন্তু সাত কলেজের ৩০টি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আজও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি! কি নিদারুণ ব্যাপার। কেনো এ-ই বৈষম্য? জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধা পেলে আমরা কেনো বঞ্চিত? এভাবে চলতে থাকলে সাত কলেজের ভবিষ্যৎ কি?

এছাড়াও স্নাতক ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা পড়েছেন আরও বেশি বিপাকে। চার বছরে স্নাতক কোর্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় গড়িয়ে পাঁচ বছরে পড়লেও এখনও সবগুলো বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফলাফলই প্রকাশিত হয়নি।

শুধু সেশনজটই নয় বরং শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্ব স্ব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাডেমিক সেবা নিতে গেলেও তাদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। কলেজ থেকে পাঠানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো হয় কলেজে। এছাড়াও সাত কলেজের সাতজন অধ্যক্ষ যে কোন সংকট সমাধানে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেন না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস নিয়েও হতাশ শিক্ষার্থীরা।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিফাত আহমেদ বলেন, আজ প্রায় ২ বছর হলো বসে আছি। সাত কলেজ যন্ত্রনা ছাড়া কিছু দিচ্ছে না। প্রশাসনের স্পষ্ট কোন দিকনির্দেশনা নেই। তাদের খাম খেয়ালিপনাতে আমাদের জীবন প্রায় ধ্বংসের মুখে। কথায় কথায় অনলাইন ক্লাসের কথা বলে৷ অথচ এই ৫০০ দিনে তারা ১৫/১৬টি অনলাইন রেকর্ডের লেকচার দিয়েছে মাত্র। তবুও এটি মাত্র ১টি কোর্সে। আমার ডিপার্টমেন্টের ৮টি কোর্স! উনারা ঘরে বসে শুধু বলে ঢাবির সার্টিফিকেট এতো সহজে পাওয়া যাবেনা৷ অথচ প্রশাসনই অনলাইন/অন্য কোন মূল্যায়ন ব্যবস্থা ৫০০ দিনেও চালু করতে পারেনি৷ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যারা আছেন তারা শুধু একে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে চলে৷

আরেক শিক্ষার্থী হাসিব বিল্লাহ বলেন, এসাইনমেন্টের মাধ্যমে প্রমোশনের বিষয়টি তুলে ধরুন৷ না হয় আগামী ১বছরেও ২ লক্ষ্যের অধিক শিক্ষার্থীদের টিকাও দিতে পারবেনা পরীক্ষাও নিতে পারবেনা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, অধিভুক্তির পর থেকে নানা জটিলতার পরও দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সেশনজট নিরসন সম্ভব হয়েছিল। সবকিছুই এটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে করোনার কারণে সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমরা এখনও পরিকল্পনা করে রেখেছি। লকডাউন শিথিল হলে যেকোন মূল্যেই হোক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত পরীক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করবো।


সর্বশেষ সংবাদ