ক্যাম্পাস জুড়ে নজরুল

  © সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক। যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত থাকলেও তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই কবি দুঃখ দুর্দশার মধ্যে জীবন পাড়ি দিয়েছেন এই বিদ্রোহী কবি। ১৯১৪ সালে দারোগা রফিজউল্লা স্বপ্নবাজ কবি নজরুলকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে নিয়ে এসে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান। কবির স্মৃতি রক্ষার্থে ত্রিশালে রয়েছে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, স্কুল-কলেজ সহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান।

বাল্যকালে ত্রিশালে নজরুল বটতলায় বাঁশি বাজিয়ে ছিলেন। সেই ছোট্ট বেলার বাঁশি বাজানোর বট গাছের স্মৃতি কে কেন্দ্র করে ২০০৬ সালে কবির নামে গড়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ২৩টি বিভাগে সাত হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। নজরুলের ( শুধুমাত্র নজরুলের গান কিংবা নাটক নয়) গান ও নাটক চর্চার জন্য রয়েছে সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খানেই ছড়িয়ে আছে কবির গান কিংবা কবিতার লাইন। বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে নজরুলের বিভিন্ন সাহিত্য কর্মের নামানুসারে, অঙ্কিত আছে কবির বিভিন্ন ম্যুরাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির নামে রয়েছে নজরুল ইনস্টিটিউট। এখানে কবি জীবন ও সাহিত্য কর্মের উপর গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষা প্রদান করা হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় নজরুল শিক্ষা বৃত্তি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে নজরুল শিক্ষা নামক বাধ্যতামূলক কোর্স। শিক্ষার্থীদের কবি সম্পর্কে জানার জন্য কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে আলাদা বুক কর্নার।

কবির সৃষ্টি কর্মের নামে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক দুটি হল অগ্নিবীণা ও দোলনচাঁপা। বাসগুলোর নাম প্রলয় শিখা, বিদ্রোহী, মহুয়া, ধুমকেতু, ঝিঙে ফুল, প্রভাতী, স্নেহের পরস, বাঁধনহারা, বিদ্যাপতি, অর্ঘ্য, দক্ষিণ হাওয়া, সওগাত,সাজের তাঁরা, সাম্যবাদী ইত্যাদি।
ভিসি বাংলো নামকরণ করা হয়েছে দুখু মিয়া বাংলো। স্মৃতিসৌধে নাম "চির উন্নত মম শির" বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার নাম চক্রবাক ক্যাফেটেরিয়া, "চুরুলিয়া" ও "গাহি সাম্যের গান" নামক দুটি মুক্তমঞ্চ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল নামকরণ করা হয়েছে "ব্যথার দান"

বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বটতলা নামক জনপ্রিয় স্থান যেখানে বসে নজরুল বাঁশি বাজিয়ে ছিলেন। সবার প্রিয় জায়গা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এই বটতলা। এখানে দল বেঁধে শিক্ষার্থী গল্পে আড্ডায় মেতে উঠেন,সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে গানের আড্ডা।

কবির জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর ২৫ মে থেকে ২৮ মে তিন দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করা হয়। নানা আয়োজনে পালিত হয় এই জন্ম জয়ন্তী। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত থাকে প্রতিটি মূহুর্ত। মন্ত্রী, উপমন্ত্রী সহ বিভিন্ন দেশ বিদেশের গুণীজনদের আগমন ঘটে। গুণীজনদের দেওয়া হয় সম্মাননা। শিক্ষার্থীরা নজরুল সম্পর্কে আরও কাছ থেকে জানতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ