ভর্তির আগেই এক বছরের সেশনজটে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
- আমান উল্যাহ আলভী
- প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ PM , আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৪ PM
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গত মার্চে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামকরণ করা হয়। এরপর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে কলেজটির প্রশাসনের দায়িত্ব থাকা সংশ্লিষ্টরা। তবে এই সেশনে সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে ক্লাস শুরু হলেও সাত কলেজ নিয়ে গঠিত প্রস্তাবিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে ভর্তি কার্যক্রমই সম্পন্ন করতে পারেনি।
এরই মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার আগেই এক বছরের সেশনজটে পড়েছেন বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্টারা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করেছে। কিন্তু ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই প্রায় এক বছরের সেশনজটে আটকে পড়ায় তাদের মধ্যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে।
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, হতাশার বিষয় হলো এখনো আমাদের ভর্তি কার্যক্রমই পুরোপুরি শেষ হয়নি। যখন ঢাবি, জাবি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আমরা এখনও আগের বছরের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারিনি। এতে আমরা কমপক্ষে এক বছর পিছিয়ে গেছি।
নবীন শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন জানান, ‘অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না থাকায় আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় আছি। আশা করছি দ্রুত কার্যকর আইন, স্পষ্ট সিলেবাস ও একাডেমিক কাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের পড়াশোনায় কোনো দেরি হবে না। বর্তমানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপরই নির্ভরশীল।’
সদ্য তিতুমীর কলেজে ভর্তি হওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এটিএম রিজওয়ান হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ২০২৪-২৫ সেশনে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে তিতুমীর কলেজে চান্স পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ভর্তি হওয়ার আগেই সেশনজটে পড়ে আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়াই অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২৪-২৫ সেশনের সব শিক্ষার্থীরাই ইতোমধ্যে তাদের স্ব স্ব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। তাদের অনেকেরই প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের এখনো ভর্তি কার্যক্রমই পুরোপুরিভাবে শেষ হয়নি।
ক্লাস শুরু করতে বিলম্ব হলেও পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। সহযোগিতার বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ সমস্যাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে—প্রশাসক, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে আজ আমরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সবার থেকে পিছিয়ে অনিশ্চয়তার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছি। এ অবস্থায় আমাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এক কঠিন বাস্তবতার শিকারে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রশাসন দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের সেশনজটের হাত থেকে উদ্ধার করে উচ্চশিক্ষা লাভে সর্বোচ্চ সুযোগ নিশ্চিত করবেন।
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তী প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। ভর্তির আগেই এক বছরের সেশনজটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অধ্যাদেশ জারি ও কাঠামো গঠনের কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শতভাগ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্লাস শুরু করতে বিলম্ব হলেও পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। সহযোগিতার বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ সমস্যাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দীন আহমদ বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসলে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই সেশনজট কাটিয়ে উঠার জন্য আমরা দরকার হয় বেশি ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করবো। এবং আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে এ সেশনকে আমরা ভর্তির পরবর্তীতে ছয় মাসের মধ্যে তাদের ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার। এর জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের তরফ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তাদের সেশনজট কাটিয়ে দেওয়ার।
.jpg)
এর আগে, আরেক দফা বাড়ানো হয় ভর্তি কার্যক্রমের সময়সীমা। ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কলেজে কাগজপত্র ও অবশিষ্ট ফি প্রদান আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরের পরিবর্তে ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়।
ঢাকার সাত সরকারি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।