দুদিন ধরে হেঁটে অফিস করছেন ইবি উপ-উপাচার্য

ইবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী
ইবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী  © টিডিসি সম্পাদিত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী গাড়ি নষ্ট থাকায় টানা দুইদিন পায়ে হেঁটে অফিসে আসছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার দুর্দশা জানার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করেনি। তবে পরিবহন বিভাগের পক্ষ থেকে উপ-উপাচার্যের অভিযোগকে অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপ-উপাচার্য এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গাড়ি নষ্ট হওয়ার পরও প্রশাসন থেকে আমাকে কোন সমাধান দেওয়া হয়নি। আমি নিজে ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে অফিসে আসতে বাধ্য হয়েছি। অফিস, বাসা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান সবকিছুর জন্য পায়ে হেঁটেই চলাচল করেছি।’

জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে গত সপ্তাহে ঢাকায় গিয়েছিলেন উপ-উপাচার্য। ছুটির সময়ে তার গাড়ি নষ্ট হয়। গাড়িটি গ্যারেজে পাঠানোর পর তাকে ঢাকা থেকে আনার জন্য রেজিস্ট্রারের ব্যবহৃত গাড়ি পাঠানো হয়। রাত ১টায় গাড়ি ক্যাম্পাসে পৌঁছালে, উপ-উপাচার্য রেজিস্ট্রারের গাড়ি চালককে পরের দিনের ডিউটি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু চালক রাম পরের দিন সেই ডিউটি করেননি।

আরও পড়ুন: প্রাপ্যতা নেই, তবুও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সম্মানীতে ব্যয় দেড় কোটি টাকা

এরপর উপ-উপাচার্যের ব্যবহারের জন্য একটি পুরাতন প্রাইভেট কার দেওয়া হয়। তবে কোমরের সমস্যার কারণে উপ-উপাচার্য বাসা থেকে অফিসে পৌঁছানোর পর গাড়িতে চড়তে অস্বীকার করেন। শনিবারের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ পথিমধ্যে তাকে নিজ গাড়িতে ভিসি বাংলোয় পৌঁছে দেন।

উপ-উপাচার্যের গাড়ি মেরামতের পরও রবিবার সকালে গাড়ি আবার নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনের ওরিয়েন্টেশন শেষে উপ-উপাচার্য নিজের গাড়ি না পেয়ে আমতলা দিয়ে হেঁটে অফিসে পৌঁছান। অডিটোরিয়ামের বাইরে থাকা প্রাইভেট কারেও তিনি চড়েননি।

পরবর্তীতে উপ-উপাচার্য ড. এয়াকুব আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গাড়ির বিষয়টি পরিবহণ প্রশাসক ও ট্রেজারারকে জানানো হলেও তারা আমার ঢাকা থেকে আসার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এসবি বা অন্য কোনো বাসে আমি ভালো টিকেটও পাইনি। তারা যখন গাড়ি পাঠিয়েছে তখন অনেক রাত হয়ে যায়। পরেরদিন ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান থাকায় আমি ঝুঁকি নিয়ে এসেছি। ক্যাম্পাসে এসেও আমি আজকে দু-দিন হলো পায়ে হেঁটে অফিস করি, বাসায় যাই, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই। গতকালও আমি হেঁটে টিএসসিসি তে গিয়েছি, আজকেও আমি হেঁটেই ওরিয়েন্টেশন শেষে অফিসে গিয়েছি, অফিস শেষে বাসায় এসেছি। আমার এই দুর্দশা দেখা ও জানার পরেও মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর বা ট্রেজারার, পরিবহন প্রশাসক, রেজিস্ট্রার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমি ভেবেছি, যদি আমাকে কোন কাজে তারা অসহযোগিতা করে, তাহলে আমি হেঁটেই অফিসে যাব, হেঁটেই অফিস থেকে আসব। কারণ আমার আর কিছু করার নাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের গাড়ি চালক রাম বলেন, আমি উপ-উপাচার্য স্যারকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পরে রাত ১ টার দিকে বাসায় নামিয়ে দেই। যাওয়ার সময় স্যার আমাকে বলেন আগামীকাল রেজিস্ট্রার স্যারকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার পরে স্যারের ডিউটি করতে। প্রশাসকের সাথে আলাপ করার ব্যাপারে বললে স্যার করবেন বলেন। কিন্তু পরেরদিন আমি সকালে প্রশাসক স্যারকে কল দিলে তিনি রেজিস্ট্রার স্যারকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে বলেই কল কেটে দেন। পরে দেখতে পাই উপ-উপাচার্য স্যার মুক্তা ড্রাইভারের প্রাইভেট কার গাড়িতে করে বাসা থেকে অফিসে গেছেন। তবে আমি স্যারের ডিউটি করিনি বা স্যারের সাথে আর যোগাযোগও করিনি, এটা আমার ভুল হয়েছে। স্যারকে প্রাইভেট গাড়িতে যেতে দেখে আমি আসলে আর সেভাবে গুরুত্ব দেইনি।

আরও পড়ুন: বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় জাবির ৭ শিক্ষক ও ১ শিক্ষার্থী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, উপ-উপাচার্য স্যার যেটা বলেছেন সেটা সত্য না। উনার গাড়ি নষ্ট হওয়ার পরে একটা পার্টস লাগবে বলে জানায় যেটা ১৫/১৬ হাজার টাকা দাম। ভিআইপি গাড়ি হিসেবে আমি মেরামত করতে বলি এবং তাকে আনার জন্য রেজিস্টারের গাড়ি পাঠানো হয়। হাফিজুর রহমান বাচ্চুর পরামর্শে আমাদের আগের ভাইস চ্যান্সেলর যেটা ব্যবহার করতেন সেই প্রাইভেট কার গাড়ি তাকে দেওয়া হয়। তিনি গতকাল গাড়িটি ব্যবহারও করেছেন, গাড়ির চালক স্ট্যান্ডবাই ছিল রাত ৯ টা পর্যন্ত। স্যারের গাড়ি গতকাল রাতে আসার পরে আজকে সকালে তাকে সার্ভিস দিতে বলা হয় এবং আজকে আবারও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে গতকালের প্রাইভেট কারটি অডিটোরিয়ামে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, যে গাড়িতে উপ-উপাচার্য স্যার ঢাকা থেকে এসেছেন ওই ড্রাইভারকে তিনি বলেছিলেন যে রেজিস্টার মহোদয়কে নামিয়ে দিয়ে স্যারের  ডিউটি করতে কিন্তু সে ড্রাইভার এটি আর আমাকে জানায়নি। এ ঘটনা ঘটার পর আজকে সে আমাকে জানিয়েছে। আমাকে জানানোর পরে সাথে সাথে রেজিস্টার স্যারের গাড়ি উপ-উপাচার্য স্যারের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে কিন্তু স্যার অজানা কারণে সেটা ব্যবহার করেন নাই। এটা যিনি বলেছেন এটা অসম্পূর্ণ এবং অসত্য। উনাকে গাড়ি না দেওয়ার তো কোনো কারণ নাই। আমি বুঝিনা উনি কেন এধরণের অভিযোগ করতে চাচ্ছেন। স্যারের কোমর ব্যথা বা অস্বস্তির বিষয়টি আরো আগে আমার কানে আসলে রেজিস্ট্রার স্যারের গাড়ি বা তার পছন্দমতো গাড়ি দিতে পারতাম।


সর্বশেষ সংবাদ