ববির একমাত্র মাঠে সব আয়োজন, সংকটে খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম
- তামজিদ হোসেন মজুমদার, ববি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ AM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি খেলার মাঠ। সেই একটিই মাঠ যেন বহুমুখী ব্যবহারের কেন্দ্রস্থল। এখানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পাশাপাশি এই একই জায়গায় চলে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন খেলাধুলা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম।
একই মাঠে ফুটবল খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা চলতে হওয়ায় তৈরি হচ্ছে অসংখ্য জটিলতা। ফুটবল খেলোয়াড়দের খেলায় বিঘ্ন ঘটে ক্রিকেট শুরু হলে, আবার ক্রিকেট খেলোয়াড়দের অপেক্ষায় থাকতে হয় ফুটবল খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ফলে কেউই ঠিকমতো অনুশীলন বা খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে, জায়গা সংকটের কারণে মাঠে একসাথে ১৮-২২ জনের বেশি খেলার সুযোগ না থাকায় অনেক খেলোয়াড়কে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দর্শকের ভূমিকায়। এতে খেলোয়াড়দের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত মে মাসে মাঠটির সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারেনি। সংস্কারের অংশ হিসেবে মাঠজুড়ে মাটি স্তূপ করে রাখা হলেও তা এখনো সরানো হয়নি। প্রশাসনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, ১৮ আগস্টের মধ্যে সংস্কার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। ফলে মাঠ এখন কার্যত অচল হয়ে আছে, খেলাধুলা একরকম বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. হাসিবুজ্জামান বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও মাত্র একটি খেলার মাঠ রয়েছে। সেটিও বর্তমানে মাটির স্তূপে ভর্তি, আমরা কোনো খেলাধুলাই করতে পারছি না। একই মাঠে সব খেলাধুলা হওয়ায় মাঠটি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অন্তত ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য আলাদা মাঠ বরাদ্দ দেওয়া।’
খেলার মাঠ সংকট নিয়ে কথা বললে আরও অনেক শিক্ষার্থী জানান, শুধুমাত্র মাঠের স্বল্পতার কারণে তাদের মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিটি খেলাই একটি মাঠেই হওয়ায় একটি খেলা শুরু হলে অন্য খেলাগুলো আর খেলা যায় না। ফলে মাঠ ব্যবহারে প্রায়ই বিবাদ সৃষ্টি হয়।
এই সংকটের জটিল রূপ দেখা দেয় গত ১২ সেপ্টেম্বর। খেলার মাঠ দখল নিয়ে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটে সংঘর্ষ। এতে দুই বিভাগের অন্তত ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে একজনের হাত এবং আরেকজনের পায়ের আঙুল ভেঙে যায়। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।
মাঠ সংস্কার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রকৌশলী মুরশিদ আবেদীন জানান, ‘বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজ পিছিয়ে গেছে। তবে আমরা কাজ পুনরায় শুরু করছি। আজকেই রোলারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মাঠে আসবে। আমরা পূজার ছুটির মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করবো, যাতে শিক্ষার্থীরা ছুটি শেষে ফিরে এসে আবার খেলাধুলা চালিয়ে যেতে পারে।’
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই একটি মাঠে শহীদ মিনার থেকে শুরু করে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন এমনকি অনুষ্ঠান আয়োজন সবই হচ্ছে একসাথে। এতে একদিকে যেমন সহশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে, অন্যদিকে খেলাধুলার পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে।