পরিবহন ও জনবল সংকটে ধুঁকছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
- আরিফ হোসাইন, ববি
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ PM
তীব্র পরিবহন ও জনবল সংকটে ধুঁকছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য ২৪টি বাসের বিপরীতে চালক রয়েছে মাত্র ১১ জন, হেল্পার ৮ জন। সীমিত পরিবহন ব্যবস্থা, লোকবল সংকট, জরাজীর্ণ যানবাহনে নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলন্ত বাস হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া, ঠেলে বাস চালু করা, ছাদের ফুটো দিয়ে পানি পড়ার মতো ঘটনা নিত্যদিনের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের মতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ৩ রুট ও নতুন যুক্ত হওয়া ৩ রুটে চলছে মোট ২৪টি বাস। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ১৩টি, ভাড়া করা বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৮টি ও একতলা বাস ৩টি। তবে ধানসিঁড়ি বাসটি দীর্ঘদিন ধরে অচল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর ৮০ শতাংশ আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত। ফলে অনেককে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয় কিংবা টিউশনের জন্য নিয়মিত শহরে যাতায়াত করতে হয়। অথচ সীমিত সংখ্যক বাস, জরাজীর্ণ যানবাহন ও বিআরটিসির নাজেহাল বাস শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। চলন্ত অবস্থায় নষ্ট হয়ে যাওয়া, ঠেলে বাস চালু করা বা ছাদ ফোঁটা দিয়ে পানি পড়ার মতো ঘটনা নিত্যদিনের।
পরিবহন পুল সূত্র জানায়, ইউজিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৫টি গাড়ি কেনার কথা থাকলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে বাস ১৩টি, মাইক্রোবাস ৫টি, জিপ ২টি, কার ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি ও মোটরসাইকেল ৩টি। ২০২০ সালের পর থেকে আর কোনো বাস বরাদ্দ আসেনি। বর্তমানে পরিবহন ক্রয়ের জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নতুন বাস কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিয় মণ্ডল বলেন, ‘নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পরিবহন সেবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। অথচ সীমিত বাসে আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। রেগুলার রুটে যেন কোনো শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে না হয় এবং নতুন রুটে যেন নড়বড়ে বাস দেওয়া না হয়—এটাই আমাদের দাবি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।‘
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমন হাওলাদার বলেন, ‘পর্যাপ্ত বাস না থাকায় আমাদের অটো কিংবা পিকআপে করে শহরে যেতে হয়। পটুয়াখালীসহ কাছাকাছি জেলা শহরে বাস চালু হলে অনেকেই সেখান থেকে আসা-যাওয়া করে পড়াশোনা করতে পারবে।‘
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, দিনের শেষ ট্রিপগুলোতে ওভারলোডের কারণে ২৮ সিটের মিনিবাসে ৫৬-৫৮ জন পর্যন্ত যাত্রী ওঠে। এতে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হয়। বিশেষ করে নতুন বাজার রুটে শিক্ষার্থীদের ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে দেখা যায়। তাদের মতে, ২৫টি পরিবহন সচল রাখতে কমপক্ষে ৩০ জন চালক প্রয়োজন।
পরিবহন পুলের নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রান্সপোর্ট) মো. জাহিদ হাসান বলেন, ’বিআরটিসি বাসগুলো ভাড়া নেওয়া। এসব বাসের চালক ও মেরামতের দায়িত্ব বিআরটিসির।‘ পরিবহন পুলের ম্যানেজার মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন,’অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যানবাহন পুরোপুরি না পাওয়ায় কিছুটা সংকট আছে। এজন্য ভাড়াকৃত বাস ও নিজস্ব বাস সমন্বয় করে সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে।‘
প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ’শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ দাবি পূরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি বিআরটিসি বাস যুক্ত হয়েছে, আরও দুইটি শিগগিরই যুক্ত হবে। পাশাপাশি ৩টি দূরপাল্লার রুট চালু করেছি।‘
অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম দাবি করেন, ’পরিবহন সংকট সমাধান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে পরিবহন পুল ও প্রক্টর অফিসের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।‘
উল্লেখ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জমি অধিগ্রহণ ও শতভাগ পরিবহন নিশ্চিতকরণের দাবিতে ৩৭ দিনের আন্দোলনের পর ৪ সেপ্টেম্বর সাত শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। ২৫ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে তারা অনশন ভাঙলেও ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিবহন সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপাচার্য। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেই সংকট আজও রয়ে গেছে।