গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের পদোন্নতির উদ্যোগ জবি প্রশাসনের

জবি লোগো
জবি লোগো   © ফাইল ফটো

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত নির্দেশ সত্ত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দর্শন বিভাগের দুই শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন বিভাগের শিক্ষক মো. জসিম খান এবং ড. মর্জিনা খাতুন। আজ শনিবার (৩১ মে) তাদের পদোন্নতি বিষয়ে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না ঘটেই এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা শিক্ষক সমাজের নৈতিকতা ও মেধার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে, যা পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে। উপাচার্য বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন বলেও জানা যায়। তারপরও পদোন্নতির বোর্ড আহ্বানের ঘটনায় নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

অভিযোগের শুরুতে এই দুই শিক্ষকের পদোন্নতির বিষয়ে কোনো আলোচনা ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া আবারও জোরদার হয়, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিলেকশন বোর্ডে মো. জসিম খান ও ড. মর্জিনা খাতুনকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, জসিম খানের ৯৩ শতাংশ ও মর্জিনা খাতুনের ৭৭ শতাংশ গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি রয়েছে। একই বোর্ডে আব্দুস সালাম নামের আরেক প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার কারণে বাদ দেওয়া হয়।

পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এক অধ্যাপক ২০২৪ সালের ৭ মার্চ শিক্ষা সচিব বরাবর অভিযোগ জমা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৭ মার্চ বিষয়টি তদন্তের জন্য ইউজিসিকে নির্দেশ দেয়। এরপর ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. এ কে এম মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম সুপারিশটি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন না করেই স্থগিত রাখেন।

পরবর্তীতে ইউজিসি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানাতে নির্দেশনা পাঠায়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সুযোগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক পুনরায় পদোন্নতির আবেদন করেন এবং দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাফিজুল ইসলাম সেই আবেদন গ্রহণ করে প্রক্রিয়া শুরু করেন। গত মার্চে একবার বোর্ড সভার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পিছিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চুরি ও অনৈতিকতার অভিযোগ থাকা অবস্থায় পদোন্নতির এমন প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষকদের নৈতিক মান ও মেধাগত গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অভিযোগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক মো. জসিম খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে। আমাদের বর্তমান উপাচার্য মহোদয় নীতিবহির্ভূত কিছু করেন না। ভিত্তিহীন বিষয়ে উপর নির্ভর করে আমার যে ক্ষতি করা হয়েছে তা অপূরণীয়। এসব করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। উনি এবং ওনার স্ত্রী এখানে জব করতেন। ওনার স্ত্রী পরে বিদেশে চলে গেছেন। উনার সাথে প্রশাসনের সমস্যা ছিল। আমরা কেন তার জন্য বলি হলাম। অন্যান্য পত্রিকায় যে নিউজগুলো হয়েছে সেখানে আমার সাথে কথা বলা হয়নি, আমার মন্তব্য পর্যন্ত জানতে চাওয়া হয়নি। আমি মনে করি সাংবাদিক হিসেবে তারা বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দেয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক ড. মর্জিনা খাতুনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি অসুস্থ বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয় এনেছে। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা শুধু নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠিয়ে দিই।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মনিরুজ্জামান জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এটি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হবে। উপাচার্য এ বিষয়ে অবগত আছেন এবং সম্ভবত তিনি সংশ্লিষ্ট চিঠিও পেয়েছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘সবকিছু নিয়মনীতি অনুযায়ী চলবে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে, তবে তা নির্ধারিত বিধিমালা অনুসারে বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!