প্রতিকূল পরিবেশে জাবিতে অতিথি পাখি কমছে

  © টিডিসি ফটো

শীতের বার্তা নিয়ে প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জাবি) আগমন করে অতিথি পাখি। সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই আরম্ভ হয় দেশের উত্তরাঞ্চলের হাঁস প্রজাতি অতিথিদের আনাগোনা। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির হাড় কাঁপানো শীতে সুদূর সাইবেরিয়ান অঞ্চলের থেকে আসে ভিনদেশী পাখির ঝাঁক।

ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আবাসনের পরিবেশ, লেক প্রস্তুত করণ, রক্ষাবেক্ষণ ও তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতি বছর অন্তত ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুনজর ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা থাকলেও ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। এতে অতিথি পাখির নিরাপদ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে অতিথি পাখি আগমনের পরিমাণ।

বিশেষ করে ছুটির দিনে ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের অঞ্চল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চাপ থাকে বেশি। আবার ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম-কানুন না নেমেই গাড়ি যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, লেকের পানিতে আবর্জনা ফেলা, পাখিদের দিকে ঢিল ছোঁড়ার মতো অপ্রীতির কাজের জন্য পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কারণে অবহেলায় অতিথি পাখির সংখ্যা দিনদিন কমতে শুরু করেছে। এ বছরও অতিথি পাখির উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা যায়, অতিথি পাখির খাদ্যের যোগান ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটা লেক লিজমুক্ত রাখা হয়েছে। পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে পূর্ব, পশ্চিম, মেডিকেলের সমানের পুকুর ও নতুন কলা ভবনের পূর্ব পাশের লেকসহ মোট চারটি লেক অবমুক্ত বা লিজ মুক্ত রাখা হয়। এই লেকগুলো লিজ দিলে প্রতিটি লেক থেকে বছরে প্রায় এক লাখ টাকা আয় হতো।

অপরদিকে, বিগত পাঁচ বছর যাবত লিজ মুক্ত আছে জয়পাড়া লেক বা বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকটি। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এই লেকটি সাত লাখ টাকায় লিজ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া এই পাঁচটি লেকের পাড় বাঁধা, দর্শনার্থীদের নির্দিষ্টি দূরুত্বে রাখার জন্য তারকাঁটা বেড়া দেয়া ও এসব রক্ষনাবেক্ষণ খাতে বছরে অন্তত আরো এক লাক টাকা ব্যয় করতে হয়।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর একটি পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সব মিলিয়ে অতিথি পাখির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতিবছর অন্তত ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।

এতো টাকা খরচের পরও অতিথি পাখিদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর কারণ হিসেবে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, লেকগুলোতে অতিথি পাখির বিচরণের উপযুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান রয়েছে। তবে অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপে পাখিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। যে পরিমাণ দর্শনার্থী পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সে পরিমাণ জনসংখ্যা ধারণ করার ক্ষমতা লেকগুলোর নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত জনগণের চিৎকার, আওয়াজ ও ছুঁটাছুটি পাখিদের বিচলিত করে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- অতিরিক্ত গাড়ি প্রবেশ ও গড়ির হর্ণের শব্দ।

পাখি গবেষণাকারী এই অধ্যাপক বলেন, অচিরেই যদি দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনায় না আনা যায় তবে অতিথি পাখির নিরাপদ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।

জানা যায়, বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীরা এসে পাখির ঝাঁক লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়া, লেকের পাশের জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে পাখিরা ভয় পেয়ে ছুঁটাছুটি করতে থাকে। অনেক সময় ভয়ে পাখিরা অন্যত্র চলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়েল এস্টেট অফিস বলছে, যে পরিমাণ দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে তা ধারণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত নয়। যার ফলে পার্কিং ও ডাস্টবিন ব্যবস্থার সংকট তৈরী হয়েছে। এছাড়া রয়েছে টয়লেটর সংকট। এর ফলে হল ও অনুষদের টয়লেট ব্যবহার করে দর্শনার্থীরা। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এমনকি ছেলেদের হলগুলোতে হরহামেশা মহিলারাও প্রবেশ করে। যা সবার জন্যই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করে।

তবে গত বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য বহিরাগত গাড়ির জন্য নাম মাত্র পার্কিং ফি নেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে এ ব্যবস্থাটিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো-কেউ পার্কিয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রাখতে রাজি হয়না। সবাই লেকের ধারে গাড়ি নিয়ে যায়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের লেকগুলোতে প্রতি বছর অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার অতিথি পাখি আসে। তাদের মধ্যে ছোট সরালির সংখ্যা বেশি। কয়েক বছর আগে সাইবেরিয়ান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখি আসতো। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ ও দর্শনার্থীদের চাপে এসব পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে প্রতিবছর একটি পাখি মেলার আয়োজন করা হয়। এ বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে ১১ জানুয়ারি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence