আঞ্চলিক সংগঠনের আড়ালে ৪ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি কুবির বাপ্পীর

  © প্রতীকী ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বাপ্পী হোসেনের বিরুদ্ধে চারজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। পৃথক ৪টি অভিযোগপত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক সংগঠনের আড়ালে তিনি এই কাজটি করতেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বরাবর এই অভিযোগ দায়ের করেন তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সবাই খুলনা বিভাগীয় ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সদস্য এবং অভিযুক্ত বাপ্পী হোসেন সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ১৮তম ব্যাচের নারী শিক্ষার্থী গত ৪ ডিসেম্বর যৌন হয়রানির প্রাথমিক অভিযোগ আনেন অভিযুক্ত বাপ্পীর বিরুদ্ধে। এরপর প্রক্টরিয়াল বডি তাকে আজ ঘটনার পুর্ণাঙ্গ বিবরণসহ লিখিতভাবে আবারও অভিযোগ দিতে বলেন।

অভিযোগপত্রে ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ‘বাপ্পি হোসেনকে আমি আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে চিনি। আমরা আঞ্চলিক সংগঠন থেকে ম্যাজিক প্যারাডাইসে ঘুরতে যাওয়ার পর থেকে আমাকে বিরক্ত করা শুরু করে। তারপর থেকে সে আমাকে যেখানে দেখত ফলো করার চেষ্টা করত। মেসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। তার জন্য এত শঙ্কিত থাকতাম যে ভার্সিটিতে এসে আজ পর্যন্ত মেসে যাওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে নিয়ে যেতে হত।’

১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ‘২০২২ সালের শেষের দিকে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য সংগঠনে মেসেঞ্জার গ্রুপে জিজ্ঞেস করলে বাপ্পী নিজে থেকে আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলেন উনিসহ যাবেন। তারপর তার সাথে পরিচয়পর্ব সহ কিছু কথা হয়। সংগঠনের বড় ভাই হিসেবে আমি তার সাথে স্টেশন পর্যন্ত আসার পর উনি জোরপূর্বক আমার হাত ধরার চেষ্টা করে। তখন আমি প্রতিক্রিয়া দেখালে তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ভয়ে ভয়ে তার সাথে ক্যাম্পাসে চলে আসি। তারপর থেকে উনি আমার মেসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাসহ বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতে থাকে। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে তিনি আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো ( যেমন: আমি সিনিয়র, বাকি সময় কিভাবে ক্যাম্পাসে আসতে পারিস দেখে নিব) শুরু করে। বাপ্পির ভয়ে আমি সংগঠনের মিটিং সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’

১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, বাপ্পী হোসেনের সাথে আমি আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে পরিচিত হই। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে বাড়িতে অবস্থানকালে তার সাথে মেসেঞ্জারের কথা শুরু হয়। তখন সে স্নেহপরায়ন ভাবে কথা শুরু করলেও উদ্দেশ্য অন্যদিকে যাচ্ছে বলে মনে হলে তাকে আমি পরোক্ষ ভাবে না কারে দিই। যখন ১৫, ১৬, ১৭ তম ব্যাচ ক্যাম্পাসে চলে আসে এবং খেয়াল করি সে যথাক্রমে ঐ ব্যাচগুলোর নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে সখ্যতার সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছে। এমনটা প্রতিটা ব্যাচের মেয়েদের সাথেই করে। এমনকি অন্যান্য সংগঠনের মেয়েদের সাথেও এমনটাই করে যাচ্ছে। শেষবার যখন আমরা সংগঠনের সবার সাথে ম্যাজিক প্যারাডাইসে ঘুরতে যাই উনি আমাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করিয়ে দেওয়ার জন্য এপ্রোচ করেন। সম্প্রতি ১৮তম ব্যাচের এক মেয়ে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ তুলার পর সে আমাকে অনুরোধ জানায় আমি যেন মেয়েটাকে নিয়ন্ত্রণ করি।’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘সে ধূর্ততার সাথে তার নাম পরিবর্তন করে চলছিলো তার নাম বাপ্পী হোসেন তবে সবার কাছে পরিচিত ছিলো বায়েজিদ আহম্মেদ বাপ্পী। ইতোমধ্যে তাকে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তার ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পরিবারের সাথে আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার রেজাল্টের বিষয়ে একটা অফিস আদেশ দিয়েছি, বিস্তারিত তদন্তের পর জানানো হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান। দ্রুতই রিপোর্ট দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বাপ্পী একটু পর জানাচ্ছি বলে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence