ক্যাম্পাসে ইফতার: ইবাদত, উৎসব থেকে প্রতিবাদ ও রাজনীতিতে রূপান্তর!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।  © টিডিসি ফটো

দেশের প্রচলিত শিক্ষালয়গুলোয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র মাস রমজানের রোজা ভাঙার বিশেষ আয়োজন ইফতার। সংযমের মাধ্যমে প্রচুর নৈকট্য লাভের আশায় সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতারে সৌহার্দ্যের বন্ধন ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি পবিত্র আত্মায়, পবিত্র প্রাণে। তারই আবহ ছড়িয়ে দিতে ইসলাম ধর্মের অনুসারী শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ইফতার আয়োজন করেন নিজেদের শিক্ষালয়গুলোর আঙ্গিনায়। 

তবে এবার সে আয়োজনে বাঁধ সেধেছে দেশের সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইফতার পার্টি না করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর। ধর্মীয় আবহে স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত হলেও এটি রূপ নেয় উৎসবে। এতে অংশ নিতে দেখা যায় অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও। উচ্চশিক্ষালয়গুলোর এমন বিমাতা-সূলত আচরণে এবারের ইফতার আয়োজন ধর্মীয় উৎসব আয়োজনকে ছাপিয়ে রূপ নিয়েছে প্রতিবাদী গণ-ইফতার কর্মসূচিতে। আর এতে সংহতি রয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোরও। 

এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয় দুটিসহ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: ইফতার পার্টি না করতে নির্দেশ: জাবি-বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রমজানের প্রথম দিন পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাবিপ্রবির গোলচত্বরে ইফতারের আয়োজন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে নোবিপ্রবিসহ মোট ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়।

গণ ইফতারের আয়োজন হয়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মোট ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণ-ইফতার’ কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে— শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

যে কারণে এত বিতর্ক
গত সোমবার (১১ মার্চ) সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইদিনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। টিডিসি ফটো।

বিজ্ঞপ্তি দুটিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আসন্ন রমজান মাসে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।

দেশজুড়ে সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ইফতার পার্টি না করতে এমন নির্দেশনা দেওয়ায় দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তুমুল সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানান। শুধু ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এই সমালোচনা ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত চর্চার প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদস্বরূপ গণ-ইফতারের ডাক দেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত বদল শাবিপ্রবির
এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (১২ই মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জানানো হয়।

আরও পড়ুন: ইউনিভার্সিটিতে এরকম ছোট নিষেধ ও ঘটতে দেওয়ার ঘটনা চলতেই থাকবে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতার পার্টি আয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তা করা হতো। তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় করে ইফতার পার্টি উদ্‌যাপন না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমাতে এবারের রমজানে সংশ্লিষ্ট কাউকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট যে কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence