নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়োগে ‘অস্বচ্ছতা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের’ অভিযোগ প্রার্থীদের, জবাব দিল প্রশাসন
- জিহাদুজ্জামান জিসান
- প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৮ AM , আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১৫ AM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দুইটি নিয়োগে অস্বচ্ছতা ও ভাইভা বোর্ডে নারী প্রার্থীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ওই দুই প্রার্থী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরীক্ষার প্রায় দেড়মাস পর এ ধরনের অভিযোগ তোলা প্রার্থীদের দুরভিসন্ধি।
এর আগে, চলতি বছরের গত ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ২টি সুপারভাইজার পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভাইভা হয় ৩১ আগস্ট। এ ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে আপত্তি ওই দুই চাকরিপ্রার্থীর।
ভাইভার একপর্যায়ে উপাচার্য আমাকে বলেন ‘এই জবটি পাওয়ার জন্য আমি কি কি স্যাক্রিফাইস করতে পারি’। কথাটি মোটেও ভালো ইঙ্গিতপূর্ণ ছিলো না। -জাহানারা মুক্তা, ছাত্রী হলের সুপারভাইজার পদের নিয়োগপ্রার্থী
এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে গত ১৪ অক্টোবর (শনিবার) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহানারা মুক্তা এবং একই বর্ষের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান। মুক্তা ভাইভা বোর্ডে হেয় প্রতিপন্ন ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আর আনিসের অভিযোগ এ নিয়োগ স্বচ্ছ হয়নি।
এদিকে, ওই দুই নিয়োগপ্রার্থীর এসব অভিযোগের জাবাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের একদিন পর গতকাল রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এস. এম. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়েছে বলে দাবি করা হয়। আর নারী প্রার্থীর তুচ্ছতাচ্ছিল্যের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করা হয়েছে।
ভালো পরীক্ষা এবং ভাইভা দেওয়ার পরও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। -আনিসুর রহমান, ছাত্র হলের সুপারভাইজার পদের নিয়োগপ্রার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে নারীদের পেশাগত জীবনে প্রবেশ নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য হিসেবে যে দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভাইভা পরীক্ষার প্রায় দেড়মাস পর নারী প্রার্থীর এমন অভিযোগ তোলা অভিযোগকারীর দুরভিসন্ধি। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপাচার্যের মানহানির পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয়।
অন্যদিকে চাকরিপ্রার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে আনিসুর রহমান বলেন, গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৩১ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেই। দুজন হল সুপারের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ৭ জন এবং ২ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ২২ জনকে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ভালো পরীক্ষা এবং ভাইভা দেওয়ার পরও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়েছে। আর নারী প্রার্থীর হেয় প্রতিপন্ন ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের অভিযোগ দুরভিসন্ধি। এতে উপাচার্যের মানহানি হয়েছে। -বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রী হলের হল সুপারভাইজার পদে মেয়েদের প্রাধান্য না দেওয়ার অভিযোগ করেন চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা। শুধু তাই নয়, নিয়োগ বোর্ডের ভাইভায় নারীদের ‘হেয় প্রতিপন্ন ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য’ করে অশোভন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার অভিযোগও করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘ভাইভার একপর্যায়ে উপাচার্য আমাকে বলেন ‘এই জবটি পাওয়ার জন্য আমি কি কি স্যাক্রিফাইস করতে পারি’। কথাটি মোটেও ভালো ইঙ্গিতপূর্ণ ছিলো না। উনি এটাও বলেন, মেয়েরা কষ্ট করতে পারে না, দৌড়াদৌড়ি করতে পারে না, মেয়েরা জব পাবার যোগ্য না। মেয়েরা সংসার সামলাবে, স্বামী-বাচ্চা-কাচ্চা দেখবে, জব করতে কেনো যে আসে এরা, একটু বেশি বুঝে। আপনার যদি স্বাবলম্বী হওয়ার এতই ইচ্ছা থাকে, তাহলে অনলাইনে বিজনেস করেন, শাড়ী-চাদর বিক্রি করেন।’’