কুবির সাংবাদিক ইকবালকে ফের ডেকেছে তদন্ত কমিটি

কুবির ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ার
কুবির ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ার  © ফাইল ছবি

সংবাদ প্রকাশের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারকে লিখিত বক্তব্যসহ উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে কমিটির মাধ্যমে হয়রানি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকবালকে দেয়া সাময়িক বহিষ্কারাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বহিষ্কারাদেশের আগে যেসব শিক্ষক মানবন্ধন করে ইকবালের শাস্তি দাবি করেছিলেন, তাদের নিয়েই গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর লিখিত বক্তব্যসহ তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য ইকবালকে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন। গত ২১ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্যকে ‘বিকৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তমূলক মিথ্যা তথ্য’ প্রচার করা হয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার কারণ ও উদ্দেশ্য উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপাচার্যের বক্তব্য ‘বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের’ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যসহ হাজির হতে বলা হয়েছে ইকবালকে। 

এর আগে এক চিঠিতে গত ১০ আগস্ট তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেছিল প্রশাসন। তবে অভিযোগ, তদন্ত ও তদন্ত কার্যক্রমের বিষয়ে অবহতিকরণের জন্য গত ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেন ইকবাল। চিঠিতে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট করে অবহিত না করেই তদন্ত কমিটি গঠন ও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, কে অভিযোগ দিয়েছে, কোন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তি কী, কাদেরকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কোথায় ও কোন গণামাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা জানেন না তিনি। বিষয়গুলো অবহিত করতে রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ জানান ইকবাল। তবে রেজিস্ট্রার সেসব বিষয় অবহিত না করেই নতুন করে চিঠি দিয়ে তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলেছেন।

এ বিষয়ে ইকবাল মনোয়ার বলেন, 'অভিযোগ, অভিযোগকারী ও তদন্ত কমিটি সম্পর্কে আমাকে জানাতে লিখিত দিয়েছিলাম আমি। আমার চিঠির উত্তর না দিয়ে আবারও আমাকে তদন্ত কমিটির সামনে লিখিত বক্তব্যসহ উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। অথচ আমি জানিই না, কী ও কার অভিযোগের বিষয়ে আমি লিখিত দেব। প্রশাসন স্পষ্টতই আমাকে ফাঁসাতে প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তদন্ত কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি জানতে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই চিঠির অনুলিপিতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীও। উভয়েই গত ২ আগস্ট উপাচার্যের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ইকবালের শাস্তি দাবি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতি হলো স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা যদি শাস্তি দাবি করে থাকেন, তাঁর মানে আগে থেকেই তিনি এ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কাজেই তাঁর কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যাবে না। কারণ তিনি ইতিমধ্যে একটি পক্ষ অবলম্বন করে ফেলেছেন।’

আরো পড়ুন: ঢাবি ভিসি প্যানেলের আলোচনায় পুরনো তিন মুখ

গত ২ আগস্ট প্রক্টরিয়াল বডি ইকবালকে বহিষ্কার করতে সুপারিশ করে প্রতিবেদন তৈরি করে। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ইকবালকে বহিষ্কার করে প্রশাসনের ‘উচ্চ পর্যায়ের সভা’। সে সভার প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। উপাচার্যের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত কার্যক্রমে তিনি সভা প্রধান হওয়ায় ব্যক্তি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ‘উচ্চ পর্যায়ের সভা’ নামেও কোনো প্রশাসনিক কাঠামো নেই।

এদিকে প্রক্টরিয়াল বডির ওই প্রতিবেদন কী অভিযোগের ভিত্তিতে ও কোন আইনের আলোকে দেওয়া হয়েছিল তা সম্পর্কে ইতোপূর্বে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। সর্বশেষ গতকালও তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইউসুফ আকাশ বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ একটি আপেক্ষিক শব্দ। কোনো সংবাদ কারও বিপক্ষে গেলে তিনি বিভিন্নভাবে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রশাসন যে অভিযোগের কথা বলেছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছুই বলেনি। তদন্ত কমিটি ও কার্যক্রম জানানো হয়নি। উপাচার্য যা বলেছেন, সাংবাদিক তা লিখেছেন। এখানে কোনো মিথ্যাচার হয়নি।

আহমেদ ইউসুফ আরও বলেন, ‘ইকবাল পেশাগত দায়িত্বে প্রতিবেদন লিখেছেন। তিনি শিক্ষার্থী হয়ে কাজ করেননি। এখানে পেশাগত পরিচয় ও একাডেমিক পরিচয় প্রশাসন গুলিয়ে ফেলেছে। এ বিষয়টি শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি। কেউ সংবাদে সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন ও উপায় রয়েছে। সে দিক দিয়ে মোকাবিলা না করে অন্যায় ও সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে একজন সাংবাদিককে হয়রানি করা হচ্ছে।’

পেশাগত কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠনের আইনি ভিত্তি নেই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকলে তিনি সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে প্রতিবাদলিপি কিংবা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি লঙ্ঘন ছাড়া শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই।’

উল্লেখ্য, ইকবাল মনোয়ার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি পদে কর্মরত এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) অর্থ সম্পাদক। গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন।

তিনি সেই বক্তব্যে ‘দেশে দুর্নীতি হচ্ছে দেখেই উন্নতি হচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন। ইকবাল মনোয়ারসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা উপাচার্যের ওই বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদন করেন। পরে ২ আগস্ট ইকবালকে আইনবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে রিট করলে ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেন।

এছাড়া বহিষ্কারাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়েও রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আপীল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে বিভাগীয় কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বাধা নেই বলেও রায় দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence