‘রাজনৈতিক নিয়োগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন উপাচার্যরা’

অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন
অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন  © টিডিসি ছবি

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সপ্তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। এবার তার ‘দেশে দুর্নীতির হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে’— এমন মন্তব্যকে সংবিধান পরিপন্থী বলে আখ্যা দেয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

অধ্যাপক মঈন এমন সময়ে আলোচনায় আসলেন যখন তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপ-কমিটিতে পদ পেয়েছেন। গত ২৪ জুলাই ঘোষিত এই উপকমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে রয়েছেন তিনি। এর ফলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে সরকার সমর্থক না হয়ে উপায় নেই, সেটা আবারও প্রমাণ করলেন অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন।

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হলেন ঢাবির প্রোভিসি, কুবির ভিসি

এদিকে, দুর্নীতি নিয়ে অধ্যাপক মঈনের বক্তব্যের পর সেটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যায়যায়দিন পত্রিকার কুবি প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট মহলে। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এ ধরণের মন্তব্য এবং এরই জেরে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন হর্তাকর্তারা কি ভাবছেন, তা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কমিশনের কেউ সরাসরি গণমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: দুর্নীতি বিষয়ে কুবি উপাচার্যের বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী: টিআইবি

তবে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ইউজিসির একাধিক উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের সঙ্গে। তারা বলছেন, দুর্নীতি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এ ধরনের মন্তব্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যদের বেপরোয়া মনোভাব এটা।

ইউজিসির উর্দ্ধতন এক দায়িত্বশীল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উপাচার্যরা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে প্রায়ই উপাচার্যরা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জেরে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন। আর এসবের অন্যতম কারণ রাজনৈতিকভাবে উপাচার্য নিয়োগ। উপাচার্যদের কেউ কেউ মনে করেন তাদের পেছনে যেহেতু রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে তাদের কখনও বিচারের আওতায় আসবে না। ফলে অনেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। 

একই মত প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, সমগ্র বিশ্বজুড়ে উপাচার্য তাদের বানানো হয় যারা শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে উপাচার্য কারা হচ্ছেন? আমাদের দেশে তাদেরকেই উপাচার্য বানানো হচ্ছে যারা সরকারের পক্ষে কথা বলবে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা একই কাজ করছে। আর রাজনৈতিকভাবে উপাচার্য হওয়া এসব ব্যক্তিরা উপাচার্যের পদে বসে এসব বেপরোয়া আচরণ করছেন।

কুবি ভিসির মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপাচার্য বলেছেন, ‘দুর্নীতি হচ্ছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে’— কত ভয়ংকর একটা কথা। এই কথার মাধ্যমে তিনি সকল দুর্নীতিকে সঠিক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। একজন উপাচার্য কিভাবে এমন কথা বলেন! আবার তিনি এটাও বলেছেন, বস ইজ অলওয়েজ রাইট। অর্থাৎ তিনি শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন বস ঠিক-ভুল যাই করুক তোমরা তার বিপক্ষে কথা বলবে না। একজন শিক্ষার্থী এই কথা পত্রিকায় প্রকাশ করায় তাকে বহিস্কারের মধ্য দিয়ে উপাচার্য তার বলা কথাকেই প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। আর এতকিছুর পরও এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের শিক্ষাঙ্গনের জন্য এ এক ভয়ংকর বার্তা।

অন্যদিকে দুর্নীতি বিষয়ে দেওয়া অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলছেন, উপাচার্যের এ বক্তব্য সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে সরকার প্রধানের জন্য অবমাননাকর। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতীয় আয়ের ২ থেকে ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ