ঝুলে আছে ৪০ ও ৪১, ৪২-এর প্রস্তুতিতে ক্ষুব্ধ বিসিএস প্রত্যাশীরা

সরকারি কর্ম কমিশন
সরকারি কর্ম কমিশন  © ফাইল ফটো

করোনা মোকাবিলায় ৪২তম বিশেষ বিসিএসসের মাধ্যমে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এদিকে দুই বছর আগে হওয়া ৪০তম ও গত বছর প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে ৪২তমের প্রক্রিয়া শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিএস প্রত্যাশীরা।

তারা বলছেন, করোনার অজুহাত দেখিয়ে ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে রাখা হয়েছে। সেই সাথে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিও নেয়া হয়নি। অথচ এরই মধ্যে নতুন করে ৪২তম বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে অসমাপ্ত বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করে তবেই নতুন বিসিএস নিয়ে ভাবা দরকার।

অন্যদিকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, আপাতত তারা ৪২তম বিসিএস নিয়েই ভাবছেন। কেননা আসন্ন শীতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে করোনার সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চায় তারা।

তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ২০১৯ সালের ৩ মে এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৫ জুলাই ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়। তবে এই পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশ করতে পারেনি পিএসসি। আর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনো এই বিসিএসের প্রিলিমিনারিই নেয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসকরা সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া করোনা রোগীদের সেবা করতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া আসন্ন শীতে করোনার প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় সরকার নতুন করে আরও ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে চাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চলতি মাসেই ৪২তম বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশ করবে পিএসসি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৪২তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আমরাও সেভাবেই কাজ করছি। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই ৪২তম বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশ করতে পারবো।

৪০ ও ৪১তমদের দাবি সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের কাজ আটকে রয়েছে। একই কারণে ৪১তমের প্রিলিমিনারিও নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পিএসসি ছোট ছোট কিছু পরীক্ষা নিচ্ছে। ৪০তম ও ৪১তম নিয়ে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা ৪০তম বিসিএসের ফল প্রকাশ না হওয়া ও ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে না পারার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিসিএস প্রত্যাশীরা। অনেকেই কেবলমাত্র বিসিএসকেই প্রাধান্য দিয়ে অন্য কোথাও চাকরির পরীক্ষা দেননি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই বেকার জীবন যাপন করছেন। তাদের দাবি আগে ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে তবেই ৪২ বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু করা হোক।

৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজীব আহসান বলেন, বিসিএসের আশায় অন্য কোথাও চাকরির জন্য চেষ্টা করিনি। অনেক পরিশ্রম করে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি। তবে প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি। অথচ নতুন করে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের জন্য সবাই এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন ফারাক কিসের জন্য? ৪০ বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করে তবেই ৪২তমের কাজ শুরু করা উচিৎ।

৪১তম বিসিএসের ফরম পূরণ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাসমি ফারহানা বলেন, এক বছর হয়ে যাচ্ছে ৪১তম বিসিএসের ফরম পূরণ করেছি। এখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই হয়নি। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগবে কে জানে। এরমধ্যে শুনলাম ৪২তম বিসিএসের প্রক্রিয়া নাকি শুরু হবে। ৪২তম নেয়া সম্ভব হলে ৪১তম বিসিএস কেন নয়?


সর্বশেষ সংবাদ